আগামী বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও ঋণ সংকট বাড়বে

১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

চলতি সাল (২০২২) একটি অনিশ্চয়তার বছর। আগামী বছর এ অনিশ্চয়তা আরও প্রকট হবে। বছরটিতে খাদ্য ও ঋণ সংকট আরও প্রকট হবে। চলতি বছরে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়েছে। জলবাযু পরিবর্তনের কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব আরও প্রকট হয়েছে। শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পণ্যমূল্যেও ঊর্ধ্বগতির কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় বাধা এসেছে। এর পাশাপাশি ছিল অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এসব কারণে করোনার মহামারি মোকাবিলা যেমন দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। তেমনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থনৈতিক ও সামজিক ক্ষতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে। সব কিছু ছাড়িয়ে এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। শুক্রবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘২০২২ সাল পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে নয়টি গ্রাফের মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী কয়েক বছরের পূর্বাভাসও দিয়েছে। প্রতিবেদনে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হলেও বাংলাদেশ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৭৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে না। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা প্রকট আকারে বেড়েছে। এর ফলে খাদ্য সংকটে ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আগামী বছরে এ সংকট আরও বাড়তে পারে। ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের এখন থেকেই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য খাতে ব্যয় সাশ্রয় করতে হবে। করোনার মহামারি মোকাবিলায় ২০২২ সালে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই গতিকে থামিয়ে দিয়ে আরও প্রকট সংকট সৃষ্টি করেছে, যা এখন বিশ্বকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এতে সংকট আরও বেড়েছে। আগামী বছরও এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় ও উন্নত দেশগুলো সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাচ্ছে। এতে স্বল্পোন্নত দেশগুলো বড় সংকটে পড়েছে। স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ তাদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনার টিকাদান প্রচেষ্টা দেশগুলোকে মহামারি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছিল। লাখ লাখ শিশুকে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার ক্ষতির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবগুলো আরও প্রকট হয়েছে। এগুলো বছরের পর বছর ধরে প্রভাবিত করতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সারা বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, জ্বালানি এবং সারের উচ্চ মূল্যে খাদ্যপণ্যেও বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭০ সালের পর বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে মন্থর অবস্থায় রয়েছে। বৈশ্বিক ভোক্তাদের আস্থা গত পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে মন্থর হয়েছে। এর প্রভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরের বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি মাঝারি আঘাত আসতে পারে, যা অর্থনীতিকে আরও মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। করোনা মহামারির কারণে গত কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য কমানোর প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। দারিদ্র্য নিরসন প্রক্রিয়া অসম হয়ে পড়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে দারিদ্র্য বেড়েছে। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৬৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করতে পারে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ কারণে প্রতিবেদনে ২০২০ সালকে দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় নিকৃষ্ট বছর হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলেছে। এসব দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এখন বড় ঝুঁকিতে। দেশগুলোর ঋণ সংকট আরও তীব্র হয়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশ দেশ ঋণ পরিশোধের ঝুঁকিতে রয়েছে।