গত ৯ বছরে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়েছেন ঢাকার মানুষ

রাজধানী ঢাকার মানুষ গত ৯ বছরে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছেন।আর এই সময়ে ৮৫৩ দিন অস্বাস্থ্যকর, ৬৩৫ দিন খুব অস্বাস্থ্যকর ও ৯৩ দিন দুর্যোগপূর্ণ বাতাস গ্রহণ করেছেন ঢাকার মানুষ। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এ তথ্য তুলে ধরেন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট নয় বছরের (৩১১৪ দিনের হিসাব) বায়ুমান সূচকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান কামরুজ্জামান। বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ক্যাপসের যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্ব ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- বাপার সহসভাপতি এম ফিরোজ আহমেদ, মহিদুল হক খান ও অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবীর সুমন। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপস চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, ‘গত নয় বছরে ঢাকার মানুষ ৬২৪ দিন মাঝারি বায়ু, ৮৭৮ দিন সংবেদনশীল বায়ু গ্রহণ করেন।২০২৪ সালের সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিনসংখ্যা হলো যথাক্রমে ২ ও ৩৫।গত ৯ বছরের মধ্যে ঢাকায় ২০২৩ এবং ২০২১ সালে খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ুমানের দিনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। এ সময়ে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন নির্মল বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে ঢাকার মানুষ। গবেষণা তথ্য তুলে ধরে ক্যাপস চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০২১ সালে খুব অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ৮৬ এবং ২০২৩ সালে অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ১৩৩। কিন্তু ২০২৩ সালে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪ দিন ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ, যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশি ছিল।অপরদিকে ২০২৪ সালের ৩৬৬ দিনের মধ্যে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ দিনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৫ দিনে।’ সংবাদ সম্মেলনে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আটটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো- ১. বায়ুদূষণকারী মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি। ২. বায়ু দূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৩. বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা। ৪. বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজসহ সব স্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামানো। ৫. সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) ও বিদ্যমান অন্য জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা এবং নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা। ৬. বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ। ৭. সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া। ৮. গৃহঅভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে গ্রামীণ পর্যায়ে জীবাশ্ম জ্বলানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি নিশ্চিত করা।