পিটার হাস বিতর্কে আ.লীগ বিএনপি

১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

রাজধানীর শাহীনবাগে ‘মায়ের ডাক’-এর অনুষ্ঠানে যারা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে গেছেন, তারা তাকে বিতর্কিত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তার মতে, এভাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করা সমীচীন হয়নি। আর ‘মায়ের কান্না’র স্মারকলিপি গ্রহণ করলে রাষ্ট্রদূত বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতেন। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, একজন কূটনীতিবিদ একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। সেখানে সরকারি দলের মদদে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নামে কিছু লোকের উপস্থিত হওয়াটা আইনবিরোধী। ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করা সমীচীন হয়নি’ : বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (কোয়াব) সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে ১৪ ডিসেম্বর (শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস) ‘মায়ের ডাকে’র অনুষ্ঠান যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি সেখানে গেছেন শুনে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বিনাবিচারে এবং ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে বিচার ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাসহ যাদের ফাঁসি দিয়েছিল তাদের সন্তান-পরিজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র জনা পঞ্চাশ সদস্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য সমবেত হন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তারা স্মারকলিপি দেওয়ার সুযোগ করে দেননি এবং সমবেতরা কথাও বলতে পারেননি। আমি মনে করি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদি তাদের স্মারকলিপি নিতেন এবং তাদের দু’টি কথা শুনতেন তাহলে তার সেখানে যাওয়া নিয়ে আজকে যে প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে সেটি হতো না। তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠনের কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যাওয়ার পরামর্শ কে দিয়েছে জানি না, তবে যারাই পরামর্শ দিয়েছে তারা সঠিক পরামর্শ দেয়নি। তার (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিজেরও দিবসটার দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল। তাছাড়া তিনি যে সেখানে যাবেন সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে না, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেটিই বলেছেন। আর তিনি যাদের কাছে গেছেন তারা অর্থাৎ ‘মায়ের ডাক’ হচ্ছে সেই সংগঠন যারা গুমের অভিযোগ করছে। কিন্তু যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তাদের অনেককেই আবার খুঁজে পাওয়া গেছে। অনেকেই খুনের ও মাদক চোরাচালানের মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত-সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যাদেরকে বিএনপি গুম হয়েছে বলে বেড়াচ্ছে। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের সামনে রাস্তায় যখন দশটা মানুষ দঁাঁড়ায়, আমাদের গাড়ি দাঁড়ায়। আমাদেরও নিরাপত্তাকর্মী থাকে, আমাদেরও নিরাপত্তার প্রচণ্ড ঝুঁকি আছে। আমি জীবনে কয়েক দফা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। কিন্তু মানুষ যখন কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য দাঁড়ায় তখন আমাদের চলন্ত গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। এখানে গাড়ি চলন্ত ছিল না, তিনি যখন ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন তখন তাকে স্মারকলিপি দেওয়া হচ্ছিল। অন্তত স্মারকলিপিটা যদি তার স্টাফের মাধ্যমেও নেওয়া হতো তাহলে আজকের সমালোচনাটা হতো না। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ। আমি মনে করি এই ঘটনা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। তবে যারা এই কাজটি করেছেন এবং করার চেষ্টা করেন তাদের এ থেকে বিরত থাকা উচিত। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও আমি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাব, কেউ যদি এ ধরনের ভুল পরামর্শ দিয়ে তাকে একপেশে করার অপচেষ্টা চালায়, সেটির ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য।’ ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটনা সরকারের মদদে’ : এদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। একজন কূটনীতিবিদ একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। সেখানে সরকারি দলের মদদে আরও কিছু লোক আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নামে (মায়ের কান্না নামে একটি সংগঠন) উপস্থিত হওয়াটাই আইনবিরোধী। এটা পরিস্কার এখানে সরকারের মদদে, তাদের সহযোগিতায় এই ঘটনা ঘটছে। সরকারের মন্ত্রীদের কথাবার্তায় তো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, এ ধরনের একটি ঘটনাকে তারা ইনডাইরেকটলি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি চেয়ারম্যান আমির খসরু আরও বলেন, সরকার চাচ্ছে এ ধরনের ঘটনা ঘটুক। এর মাধ্যমে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হোক। তারা দেশের মানুষকে ভয়ভীতির মাধ্যমে দমিয়ে রাখতে চাইছে। এখন কূটনীতিকদেরও ভয়ভীতি দেখাতে চাইছে। একটা ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করে অবৈধ, দখলদার সরকার অব্যাহতভাবে ক্ষমতার থাকার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, একদিকে বাংলাদেশের মানুষ যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, অন্যদিকে কূটনীতিকদের নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভালো। তাদের সঙ্গে আমাদের বড় বাণিজ্য আছে, বহুবিধ সুসম্পর্ক আছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এখানে যে দেশের মানুষের নিরাপত্তাহীনতা, কূটনীতিকদের নিরাপত্তাহীনতা, এটা কি প্রতিফলন ঘটে। এটা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমির খসরু বলেন, কেউ যদি নিজেদের অনুষ্ঠান করতে চায় সে অধিকার আছে। কিন্তু আরেকটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখানে বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া এবং সেটাকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া অগণতান্ত্রিক। আর এটা প্রথমবার নয়। এর আগেও দেখেছি সরকারি দলের মদদে মোহাম্মদপুরে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে আক্রমণ হয়েছে। তিনি বলেন, শাহীনবাগের ঘটনায় বলা হচ্ছে যে সরকারকে বলা হয়নি। তার মানে এটার অর্থ সরকারকে না বলে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না। এটা কোথায় আছে? রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও তো পুলিশের বহর আছে। তার মানে সরকার অবগত আছে। যদি বলাও না হয় এটার অর্থ এই যে, আপনি সরাকারকে না বলে কোথাও গেলে সে মানুষগুলো নিরাপত্তা পাবে না। এটা কি হতে পারে নাকি। এর আগে দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, শাহীনবাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। আওয়ামী দুঃশাসনের যে অপরাজনীতি, তা থেকে বাংলাদেশের কেউ তো নয়, বিদেশিরাও আজকে নিরাপদ নয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হেনস্তার ঘটনায় সরকার জড়িত।