২ দেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে ওষুধ রপ্তানি বাজার

দেশে চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধ তৈরি হলেও এর কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। ওষুধ তৈরিতে অন্তত ৪০০ ধরনের অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) বা কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেশে ৪১ ধরনের কাঁচামাল উৎপাদন হয়। এজন্য ২১টি কোম্পানি কাজ করে। ফলে ৯০ শতাংশ এপিআই আমদানি নির্ভর হওয়ায় দেশে ওষুধের দাম কমানো এবং রপ্তানির বাজার ধরা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে ওষুধ শিল্প সমিতি। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি’র (বাপি) কার্যালয়ে ‘জার্নি অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান, এসিআই হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম মহিবুজ্জামান, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল প্রমুখ। কর্মশালায় এক প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন বলেন, ওষুধের কাঁচামাল তৈরির জন্য ৪৯টি সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এসব সংস্থার অনুমোদন নিতে ছয় মাসের বেশি সময় চলে যায়। এরপর কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য ৫০০ টন উপকরণ প্রয়োজন হলে আমদানির অনুমোদন মেলে ১০০ টনের মতো। এছাড়া ওষুধের কাঁচামাল তৈরিতে আলাদা আলাদা মেশিন প্রয়োজন হয় যার দাম অনেক। এসব সমস্যা যতদিন সমাধান না করতে পারব ততদিন ওষুধের কাঁচামাল শিল্প হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এক ছাতার মধ্যে সব সেবা আনার প্রস্তাব থাকলেও সরকার এটা করতে পারেনি। তিনি বলেন, সাধারণত ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করে চীন ও ভারত। এসব দেশে থেকেই আমরা কাঁচমাল তৈরি উপকরণ আমদানি করছি। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি দামে এসব উপকরণ বিক্রি করছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমরা পারব না। জাকির হোসেন বলেন, ১৮ বছর আগে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধ শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠায় ২০০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। চীনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম পরিদর্শন এসে জানান, এত ছোট জায়গায় কীভাবে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি হবে। চীনের একটি করখানার ৫৫০ একর আয়তন। এজন্য এ পার্কে কারখানা স্থাপন ও এপিআই তৈরিতে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ কম। গজারিয়ায় ওষুধ শিল্পপার্কে ৪২টি প্লট ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানি সেখানে উৎপাদনে যাবে বাকিরা হয়ত এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একীভূত (মার্জ) হবে। জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প গত এক দশকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে ওষুধ রপ্তানি ছিল মাত্র ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এ রপ্তানির পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ওষুধ শিল্প সমিতির ট্রেজারার ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, চাল, ডাল ও তেল সবকিছুর দাম বাড়ছে। ওষুধ ভিন্ন জগতে তৈরি হয় না। কাঁচামাল, পরিবহণ, ট্যাক্স, গবেষণা ও উন্নয়নসহ প্রতিটি পর্যায়ে খরচ বাড়ছে। অথচ দাম আগের মতোই থাকছে। এই খাতে যদি দ্রুত মূল্য সমন্বয় না হলে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাবে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রমোশনাল খরচ নিয়ে বাজারে নানা ধরনের সমালোচনা থাকলেও এসবের যৌক্তিক ভিত্তি নেই উল্লেখ করে হালিমুজ্জামান বলেন, প্রমোশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির আর কোনো মাধ্যম নেই। চিকিৎসকদের কাছে নতুন ওষুধ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য পৌঁছে দিতে হয়। অনেকে বলে কোম্পানিগুলো ওষুধ প্রমোশনে ৩০ শতাংশ খরচ করে। বাস্তবে তা নয়। স্কয়ার, বেক্সিমকো ও রেনেটা কোম্পানি পাবলিক লিমিটেড। তাদের হিসাবপত্র ওপেন। প্রকৃত চিত্র সেখানে খুঁজলেই মিলবে। সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ শতাংশের বেশি কারো পক্ষেই খরচ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, একই ধরনের ওষুধ হলেও ‘লেভেল অব সেফটি’ নিশ্চিত করতে বাড়তি খরচ হয়। বিশেষ করে যদি কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ অনুমোদন নিতে চায়, তবে ডাটা সেফটি, ইন্টিগ্রিটি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। এ সময় এসিআই হেলথকেয়ারের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম. মুহিবুজ্জামান বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।