ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

২১ এপ্রিল, ২০২৫ | ১০:০০ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ভোলায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ভোলা-বরিশাল সেতু বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। রোববার সকালে ভোলা শহরের বাংলা স্কুল মাঠে ‘আগামীর ভোলা’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। পরে দুপুরে দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহর প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ কর্মসূচিতে ভোলার দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এর আগে এ সকল দাবি নিয়ে গত শুক্রবার থেকে ভোলা থেকে সিএনজি করে ঢাকায় গ্যাস নেওয়ার পথে ইন্ট্রাকোর কোম্পানির গ্যাসভর্তি গাড়ি আটকে দেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা। শনিবার রাত পর্যন্ত মোট ৮টি গ্যাসভর্তি গাড়ি শহরের হেলিপ্যাডে আটকে রাখা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানোর পরও আন্দোলনকারীরা গাড়িগুলো আটকে রাখেন এবং দাবি বাস্তাবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এক বিন্দু গ্যাস ভোলার বাইরে নিতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা ভোলাবাসী বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকারে অনেক পিছিয়ে। আমাদের প্রাণের দ্বীপ জেলা ভোলায় রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুত। বাপেক্সের হিসেবে ভোলায় প্রায় ৭টিসিএফ গ্যাস মজুত রয়েছে। সারা পৃথিবীতে উত্তোলন স্থানের বাসিন্দাদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ভোলাবাসীকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। নামেমাত্র দুই হাজার ৩৩৫টি আবাসিক সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অথচ বর্তমানে দৈনিক ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়। এক্ষেত্রে আমরা বৈষম্যের শিকার। তাই ভোলার গ্যাস ভোলাবাসীর অধিকার সর্বপ্রথম। এমনকি আমাদের গ্যাস আমাদের না দিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১৯৯৩ সালে ভোলায় প্রথম গ্যাস আবিষ্কার হলেও আজও এখানো তেমন কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। তাই আমরা ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ ও গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়ও ভোলা বাংলাদেশ থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। ভোলায় প্রায় ২০ লাখ লোকের বসবাস। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো ভোলায় কোন মেডিকেল কলেজ না থাকায় মানসম্পন্ন চিকিৎসা থেকে আমরা বঞ্চিত। এমনকি ছোটখাটো কোন দুর্ঘটনা হলেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। অনেক রোগী ঢাকায় যাওয়ার পথেই মারা যান। আমরা অবিলম্বে ভোলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ চাই। বক্তারা আরও বলেন, ভোলায় বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতি গ্যাস, খাদ্যশস্য ও বিপুল ইলিশ উৎপাদন হলেও ভোলার সঙ্গে বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। আমাদের যাতায়াতের একমাত্র বাহন হলো লঞ্চ। বেতুয়া থেকে সর্বশেষ লঞ্চ বিকাল ৫টায়, আর ইলিশা থেকে রাত ১০টায়। এরপর জরুরি প্রয়োজন হলেও ভোলা থেকে বের হওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকে না। এমনকি ভোলায় কোন নিকটআত্মীয় মারা গেলে সময়মতো শেষ দেখাও হয় না অনেক সময়। কেউ বড় অ্যাক্সিডেন্ট করলেতো মরা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। তাই ভোলা-বরিশাল সেতু আমাদের মৌলিক অধিকার। আমারা দ্রুত ভোলা-বরিশাল সেতু বাস্তাবায়ন চাই। আমাদের এ সকল দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এ সকল দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ২৭ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ করা হবে এবং পরবর্তীতে সচিবলায় ঘেরাওসহ ভোলায় হরতাল ও সরকারকে সকল প্রকার কর দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। আগামীর ভোলার মুখপাত্র মীর মোহাম্মদ জসিমের সভাপতিত্বে জিএম ছানাউল্লার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন- জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসুল আলম, যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক, অধ্যক্ষ খালেদা খানম স্বেচ্ছাসেবক দল জেলা আহবায়ক মিজানুর রহমান মাসুদ, সদস্য সচিব রবিব চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর ভোলা পৌরসভার আমীর মো. জামাল উদ্দিন, জাতীয় পার্টির (বিজেপি) জেলা সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, সম্পাদক মোতাসিন বিল্লাহ, ইসলামী আন্দোলনের জেলা উত্তরের সাধারন সম্পাদক তরিকুল ইসলাম তারেক, ব-দ্বীপ ছাত্র কল্যাণ সংসদের আহবায়ক রাহিম ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলার প্রতিনিধি ইয়াছিন আরাফাত, মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ।