মাস্ক কি নর্টনের মতো নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্রাট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন?

দেশবিদেশের খবর রাখেন অথচ ধনকুবের ইলন মাস্কের নাম শোনেনি, বিশ্বে এমন লোক খোঁজে পাওয়া মোটেও সহজ নয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই ধনকুবের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেসলা ও স্পেসএক্স গোটা বিশ্বেই আলোড়ন তৈরি করেছে। সেই তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বলা হয়, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকলেও পেছনে থেকে মূল কলকাঠি নাড়েন ইলন মাস্কই। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ বনে গিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই ধনকুবের। তবে তিনিই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান নন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্রাট হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে, ১৮৫৯ সালে একজন দক্ষিণ আফ্রিকান নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্রাট ঘোষণা করেছিলেন। তিনি জোশুয়া নর্টন। ১৮৫৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে একজন ‘সুসজ্জিত এবং গম্ভীর চেহারার লোক’ দ্য সান ফ্রান্সিসকো ইভিনিং বুলেটিনের অফিসে প্রবেশ করেন এবং কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই একটি নথি হাতে ধরিয়ে দিয়ে তা প্রকাশ করার নির্দেশ দেন। কৌতূহলী হয়ে, পত্রিকার সম্পাদকরা সেই সন্ধ্যার সংস্করণের ৩ পৃষ্ঠায় একটি ঘোষণা প্রকাশ করেন। সেই ঘোষণাপত্রে লেখা ছিল— ‘এই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুরোধ এবং আকাঙ্ক্ষায় আমি জোশুয়া নর্টন, পূর্বে আলগোয়া উপসাগর কেপ অফ গুড হোপের বাসিন্দা এবং বর্তমানে গত ৯ বছর ১০ মাস ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে বসবাসকারী, নিজেকে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্রাট ঘোষণা করছি।’ এরপর নথিতে সারা দেশের প্রতিনিধিদের সান ফ্রান্সিসকোর মিউজিক্যাল হলে মিলিত হতে বলার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়- ‘ইউনিয়নের বিদ্যমান আইনগুলোতে এমন পরিবর্তন আনা যায় যার অধীনে দেশটি যে মন্দ কাজ করছে তা প্রশমিত করা যাবে। এতে স্বাক্ষর করেন নর্টন। যেখানে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্রাট হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। নর্টন যুক্তরাষ্ট্রের দাসপ্রথা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার কথা উল্লেখ করছিলেন। দক্ষিণের রাজ্যগুলো মূলত তাদের অর্থনীতির জন্য দাসত্বপ্রাপ্তদের উপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু উত্তর এর বিরোধিতা করেছিল। ১৮৬০ সালে দাসপ্রথা বিরোধী রিপাবলিকান প্রার্থী আব্রাহাম লিংকন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, দক্ষিণের রাজ্যগুলো ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে - যার ফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। নর্টনের ডাকা সভাটি হওয়ার ঠিক ৯ দিন আগে মিউজিক্যাল হলটি পুড়ে যায়। পরে নর্টন এটি অন্য স্থানে পুনঃনির্ধারণ করেছিলেন। তবে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দৃশ্যত কেউ উপস্থিত হননি সেই সভায়। জোশুয়া নর্টন সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সম্রাট হতে না পারলেও তার উত্তরসূরি ও টেসলা ধনকুবের ইলন মাস্ক সেটা পেরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গতিপথকে প্রভাবিত করছেন তিনি। অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিচ্ছেন। তথ্যসূত্র: আলজাজিরায় নিক ডলের লেখা প্রতিবেদনের অনুবাদ।