ইয়েমেনি বন্দরে মার্কিন হামলায় হতাহত ১৮৪

গুরুত্বপূর্ণ রাস ইসা তেলবন্দরসহ ইয়েমেনের কয়েকটি বন্দরে চালানো মার্কিন বিমান হামলায় অন্তত ৫৮ জন নিহত ও ১২৬ জন আহত হয়েছেন। এটিই এখন পর্যন্ত ইয়েমেনে মার্কিন বাহিনীর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী হামলা বলে দাবি করেছে হুথি-ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম আল মাসিরাহ। হুদাইদার স্বাস্থ্য অফিসের বরাত দিয়ে আল মাসিরাহ টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের এই হামলাটি একাধিক এলাকায় চালানো হলেও মূল আঘাতটি হেনেছে রাস ইসা বন্দরের আশপাশে। এ বিষয়ে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) বলছে, এই বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল হুথিদের তেলের জোগান ও অর্থনৈতিক উৎস ধ্বংস করা। CENTCOM-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইরান-সমর্থিত হুথি সশস্ত্র গোষ্ঠীর জ্বালানি উৎস ধ্বংস করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে’। এদিকে আল জাজিরার প্রতিবেদক মুহাম্মদ আল-আত্তাব জানিয়েছেন, ‘যখন বন্দরটিতে লোকজন কাজে ব্যস্ত ছিল, ঠিক তখনই হামলার প্রথম চারটি বোমা বর্ষণ তখনই হয়। এ সময় ট্রাকচালকসহ বহু সাধারণ শ্রমিক ছিলেন ঘটনাস্থলে’। স্থানীয়দের মতে, আক্রমণের আকস্মিকতায় বহু নিরীহ শ্রমিক ও কর্মী হতাহত হন। হামলার ভিডিও ফুটেজে বিস্ফোরণের ভয়াবহতা, ধ্বংসস্তূপ ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির দৃশ্য দেখা যায়। আল মাসিরাহ জানিয়েছে, ইয়েমেনি রেড ক্রিসেন্ট ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের চিকিৎসা ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। মূলত রাস ইসা, হুদাইদাহ ও আস-সালিফ—এই তিনটি বন্দর দিয়েই ইয়েমেনে প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানি ও ৮০ শতাংশ মানবিক সহায়তা প্রবেশ করে। জাতিসংঘের মতে, রাস ইসা বন্দর ও তেল পাইপলাইন হলো ‘অপরিহার্য ও অপরিবর্তনীয় অবকাঠামো’। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর এই হামলা হলো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযানের অংশ। এর আগে মার্চে দুই দিনের মার্কিন হামলায় ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন বলে জানান হুথি কর্মকর্তারা। হুথিদের দাবি, লোহিত সাগরে তারা ইসরাইল-সংযুক্ত জাহাজের বিরুদ্ধে ১০০-র বেশি হামলা চালিয়েছে, যা গাজার ওপর চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া। হুথি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসের আল-আতিফি বলেন, ‘আমেরিকার এই অপরাধ আমাদের গাজার পাশে দাঁড়ানোর সংকল্পকে একটুও দুর্বল করবে না, বরং আরও শক্তিশালী করবে’। অন্যদিকে ওয়াশিংটন হুথিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘যতক্ষণ না হুথিরা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধ করছে, ততক্ষণ মার্কিন হামলাও চলবে’। এদিকে মার্কিন হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানায়, তারা ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই হামলা শুধু ইয়েমেনের ভেতরে নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার সূচনা করতে পারে। তাদের মতে, যুদ্ধক্লান্ত ইয়েমেন আরও একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সূত্র: আল-জাজিরা