মুঘল আমলের প্রত্ননিদর্শন গোয়ালবাথান মসজিদ

২৭ মার্চ, ২০২৫ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সাড়ে চারশ বছর ধরে ইতিহাসের পাতা মেলে ধরে আছে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন গোয়ালবাথান মসজিদ। নড়াইল সদর উপজেলার চণ্ডীবরপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামে অবস্থিত মসজিদটি। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, মসজিদটিতে রয়েছে মুঘল স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট ছাপ। যে কারণে শান্তি ও সৌহার্দের প্রতীক মসজিদটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ হওয়ার পাশাপাশি অনন্য প্রত্ননিদর্শনও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটক দেখতে আসেন মসজিদটি। প্রচলিত রয়েছে, ‘জিনদের সাহায্যে এক রাতেই’ নির্মিত এটি ‘জিনের মসজিদ’ নামেও পরিচিত। মসজিদের পাশে বিশাল আকারের পুকুরের শান্ত জলরাশির সঙ্গে মসজিদের নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। স্থানীয়দের ধারণা, মসজিদটি রাতের যে কোনো সময় অলৌকিকভাবে নির্মাণ হয়েছে। কারণ, সকালে ঘুম থেকে উঠে মসজিদটি দেখা যায়। মুঘল আমলে মুন্সি হয়বৎউল্লাহ নামের এক বুজুর্গ কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে আসেন গোয়ালবাথান গ্রামে। গ্রামে এসে জঙ্গলের মধ্যে আস্তানা গাড়েন এই সাধক। এ অঞ্চল তখন গরু চরানোর চারণভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হতো। সেখানে মুন্সি হয়বৎউল্লাহ রাস্তা তৈরি করে বসতি গড়া শুরু করেন। তিনিই ওই গ্রামের প্রথম বাসিন্দা ছিলেন। একদিন তিনি সঙ্গীদের নিয়ে জঙ্গলের কয়েকটি গাছ কেটে ঘর তৈরির উদ্যোগ নেন। হঠাৎই এক রাতে তিনি স্বপ্নে ‘বাড়ি তৈরি না করে মসজিদ নির্মাণ কর’-এরকম নির্দেশনা পান। একই স্বপ্ন তিনি পরপর তিনরাত দেখেন। এই স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। প্রচলিত আছে, জিনদের সাহায্য নিয়ে এক রাতেই অলৌকিক শক্তি দিয়েই এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেন হয়বৎউল্লাহ। একই সময়ে এলাকার মানুষের সুপেয় পানির জন্য মসজিদ লাগোয়া বিশাল আকৃতির পুকুর খনন করা হয়। প্রাচীন ও ইসলামিক স্থাপত্যনিদর্শনসমৃদ্ধ মসজিদটির চারপাশ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা দিয়ে ঘেরা। এলাকার মুসল্লিরা বিশ্বাস করেন যে, হঠাৎ গড়ে ওঠা এই মসজিদে একসময় জিনেরা নামাজ পড়তেন। মুঘল আমলে তৈরি আশ্চর্য হওয়ার মতো এই মসজিদে ৪৫০ বছর ধরে নিয়মিত এবং শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। সরেজমিন দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির অবস্থান নড়াইল জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে চণ্ডীবরপুরের গোয়ালবাথান গ্রামে। ৫ একর ৭০ শতক জমির ওপর গড়ে উঠেছে মসজিদটি। এর দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট। হাতে তৈরি পাতলা ইট আর চুন-সুরকির গাঁথুনিতে তৈরি মসজিদটির গম্বুজে রয়েছে সুনিপুণ নান্দনিক ছোঁয়া। সুগঠিত ছোট চারটি মিনার আর দেওয়ালে অসাধারণ কারুকাজও রয়েছে। রয়েছে বজ পাত নিরোধক লোহার দণ্ড। তবে কোনো পিলার নেই। কোনো রডের ব্যবহার ছাড়াই মসজিদটি অপূর্ব স্থাপত্য নির্মাণশৈলী হয়ে আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের ভেতরে গরমের সময় ঠান্ডা এবং ঠান্ডার সময় গরম অনুভূত হয়। মুন্সি হয়বৎউল্লাহর বংশধর মুন্সি রহমতউল্লাহ বর্তমানে এই মসজিদের ইমামতি করছেন। তিনি জানান, ‘আমার পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, এক গম্বুজ জামে মসজিদটি এক রাতেই নির্মাণ হয়েছে। ধারণা করা হয়, নড়াইলে এটিই সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। এখানে একসময় দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করতে আসতেন। এখনো নানা বয়সের মানুষ মসজিদটি দেখতে ছুটে আসেন।’ জানতে চাইলে নড়াইলের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি শুনেছি মসজিদটি সাড়ে ৪শ বছর আগে মুঘল আমলে তৈরি। স্থানীয়রা এটিকে জিনের তৈরিও বলে থাকেন। পুরোনো মসজিদ সংরক্ষণে শিগ্গিরই আমাদের প্রকল্প চালু হবে। ইতোমধ্যে আমরা গোয়ালবাথান মসজিদের নাম যুক্ত করেছি। আশা করছি, মসজিদটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।’