যেভাবে রাশিয়ার ক্ষমতায় এসেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন

২৬ মার্চ, ২০২৫ | ৮:০৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের সর্বশেষ সফরে ২০০০ সালে মস্কো গিয়েছিলেন বিল ক্লিনটন। সেবার মস্কো গিয়ে তিনি তার রুশ সমকক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর মাত্র তিন মাস আগে পুতিন রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। পুতিন নিয়ে ক্লিনটনের মন্তব্য ছিল, একদিন রাশিয়াকে শক্তিশালী ও সম্পদশালী করবেন তিনি। পরে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে ফোনালাপেও পুতিনের প্রশংসা করেছিলেন ক্লিনটন। যদিও পরে আরেকটি ফোনকলে পুতিন গণতন্ত্রের হন্তারক হবেন, এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। সেই ফোনকলের দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। ৬ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নতুন প্রেসিডেন্ট এসেছেন আর গেছেন। কিন্তু রাশিয়ায় এখনো রাজত্ব চলছে পুতিনের। জোসেফ স্টালিনের পর তিনিই এখন রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতা। এক সময় ছিলেন রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সদস্য। কিন্তু ক্ষমতায় বসে নেন সাহসী সামরিক পদক্ষেপ। আর ক্ষমতার ওপর এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ নেন, কেউ তার প্রতিপক্ষই হতে পারেনি। বিশ্ব রাজনীতিতে পুতিন দুই দশকের বেশি সময় ধরে সবচেয়ে প্রভাবশালী, বিতর্কিত এবং ক্ষমতাশালী নেতাদের একজন। ১৯৫২ সালে ৭ অক্টোবর লেনিনগ্রাদ (বর্তমানে সেইন্ট পিটার্সবার্গে) জন্মগ্রহণ করেন পুতিন। তার পুরো নাম ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন। তার বাবার নাম ভ্লাদিমির স্পিরিদোনোভিচ ও মায়ের নাম মারিয়া ইভানোভনা পুতিনা। স্পিরিদোনোভিচ সোভিয়েত নৌবাহিনী একজন কন্সক্রিপ্ট ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আক্রমণের সময় তাকে NKVD ডেস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নে স্থানান্তর করা হয়। পুতিনের দাদা স্পিরিদন পুতিন বলশেভিক নেতা ও সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ভ্লাদিমির লেনিন এবং জোসেফ স্টালিনের ব্যক্তিগত পাচক ছিলেন। স্কুল নং ১৯৩ দিয়ে পুতিনের শিক্ষাজীবনের শুরু। পরে সেইন্ট পিটার্সবার্গ হাইস্কুল ২৮১ তে ভর্তি হন তিনি। সেখানে তিনি জার্মান ভাষা শেখেন। ১২ বছর বয়সে জুডো ও সাম্বোতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন পুতিন। লেনিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। পরে সেইন্ট পিটার্সবার্গ মাইনিং ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতির ওপর ডিগ্রি নেন পুতিন। ১৯৭৫ সালে ৪০১তম কেজিবি স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে পুতিন লেনিনগ্রাদে বিদেশিদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, তিনি পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে গোপন অনুবাদক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এসময় তিনি পূর্ব জার্মানির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিষেবা স্ট্যাসিকে সহযোগিতা করছিলেন। একপর্যায়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবী পর্যন্ত পৌঁছান পুতিন। বার্লিন দেয়ালের পতন ঘটলে ১৯৯০ সালে পুতিন লেনিনগ্রাদে ফিরে আসেন। এরপর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কেজিবিতে রিক্রুট শুরু করেন। মিখাইল গর্বাচেভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে ১৯৯১ সালে কেজিবি থেকে পদত্যাগ করেন পুতিন। এরপর বাড়তি কিছু আয়ের জন্য ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। কেজিবি থেকে পদত্যাগের আগের বছর লেনিনগ্রাদের মেয়র আনাতোলি সবচাকের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হন পুতিন। পরের বছর তিনি মেয়রের কমিটির বিদেশ নীতিবিষয়ক প্রধান হন। ১৯৯৪ সালে সেইন্ট পিটার্সবার্গ সরকারের প্রথম উপ-চেয়ারম্যানও হন পুতিন। ১৯৯৬ সালে মস্কোয় চলে যান তিনি। সেখানে তিনি তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিনের প্রশাসনে যোগ দেন। মূলত তখন থেকেই পুতিনের ভাগ্য খুলে যায়। ইয়েলেৎসিনের প্রশাসনে পুতিন বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। গোয়েন্দা সংস্থা FSB-র পরিচালক হওয়া থেকে শুরু করে ১৯৯৯ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। ইয়েলতসিন পদত্যাগ করলে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান পুতিন। অপেক্ষাকৃত অপরিচিত হলেও ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাপার্টমেন্টে বোমা হামলা ও দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে তার নেওয়া পদক্ষেপ পুতিনকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এ সময় নবগঠিত ইউনিটি পার্টির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি। প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েই ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পুতিন। চার বছর পর আবারও পুনঃনির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পুতিন। ২০১২ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সেই ধারা ২০১৮ ও ২০২৪ সালেও বজায় থাকে। নিজের নতুন প্রশাসনে মিখাইল মিশুস্তিনকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন পুতিন।