‘আপত্তিকর আচরণের’ কারণে খুন হাবীবুল্লাহ কলেজের উপাধ্যক্ষ

টাকা-পয়সা রাখার ব্যাগ হারিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে অসহায় অবস্থায় পড়েন এক দম্পতি। তাদের দুজনেরই বয়স ২৫-এর কম। তাদের অসহায়ত্ব দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন হাবীবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মো. সাইফুর রহমান ভূঁঞা। দুজনকে তার বাসায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান উত্তরখানের ভাড়া বাসায়। চাকরির কথা বলে নিলেও সাইফুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল ওই নারীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর আচরণ’ করা। সুযোগ পেলেই যুবককে বাইরে পাঠিয়ে তার স্ত্রীর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন সাইফুর রহমান। সবশেষে গত রোববার রাতে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা করলে তার স্বামী প্রতিবাদ করেন, ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে বঁটি দিয়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান ওই দম্পতি। পরে সাইফুর রহমানকে উদ্ধার করে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই ওই দম্পতিকে খুঁজছিল পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ফরিদপুর থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা মূল সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি। সব বিষয় সামনে রেখে আমাদের তদন্ত চলমান আছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যার কারণ বের করা সম্ভব হবে। উত্তরা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, টাকা-পয়সা হারিয়ে দিশেহারা দম্পতিকে আশ্রয় দিলেও সাইফুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তিনি যুবকের স্ত্রীকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেন বারবার। একবার ধর্ষণ করেছেন বলেও গ্রেপ্তার নারী দাবি করেছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কমলাপুর রেলস্টেশনে টাকা-পয়সা হারিয়ে অসহায় অবস্থায় বসে ছিলেন ওই নারী। সাহায্যের জন্য পাশের একজন নারীকে ডাকলে তাদের কাছে আসেন সাইফুর রহমান। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, টাকা-পয়সা হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সাইফুর রহমান। তার ছয়তলা বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে জানিয়ে দুজনকে তার বাসায় থাকার জন্য বলেন সাইফুর। সব শুনে এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার স্বামী-স্ত্রী সাইফুর রহমানের বাসায় যেতে রাজি হন। গ্রেপ্তার দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সাইফুর রহমান বলেছিলেন, তার বাসায় স্ত্রী-সন্তান আছে। কিন্তু উত্তরখানে বাসায় গিয়ে চাবি দিয়ে বাসার তালা খোলার সময় তারা স্ত্রী-সন্তানের কথা জানতে চাইলে সাইফুর রহমান বলেন, স্ত্রী-সন্তান কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছে। তারা চলে আসবে। বাসায় যাওয়ার পর থেকেই নারীকে ‘বেড টাচ’ করে আসছিলেন সাইফুর রহমান। নানা অজুহাতে যুবককে নিচে বা বাইরে পাঠিয়ে তার স্ত্রীকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেন। সবশেষ গত রোববার রাতে তরুণীকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধর্ষণের চেষ্টা করেন সাইফুর রহমান। ওই দম্পতির বরাতে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রোববার রাতে স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন সাইফুর রহমান। ধস্তাধস্তিতে স্বামীর ঘুম ভেঙে গেলে সাইফুর রহমানের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে বঁটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সাইফুর রহমানকে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যান তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত সাইফুর রহমান হাবীবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি কলেজটির ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষও ছিলেন। রাজধানীর শান্তিনগরে একটি বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। উত্তরার ভাড়ার বাসাটিতেও মাঝেমধ্যে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার বাসুদেব গ্রামে। তার বাবার নাম খলিলুর রহমান ভূঁঞা। নিহত শিক্ষকের স্ত্রী গণমাধ্যমে বলেন, সাইফুর রহমান বেশ কয়েক মাস ধরে আলাদা থাকেন। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বাসায় আসতেন। আবার চলে যেতেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলতেন না। কোথায় থাকে জানতে চাইলে বলতেন বন্ধুর বাসায় থাকেন। সোমবার বিকেলে ওসি কল করে হত্যার বিষয়টি জানান। এদিকে সোমবার রাতে নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ভূঁঞা উত্তরখান থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেছেন, সাইফুর রহমানের উত্তরার ভাড়ার বাসার পাশে তার স্ত্রীর পৈতৃক সম্পত্তি আছে। সেখানে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গত ৩ থেকে ৪ মাস ধরে পাশের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। এজাহারে বলা হয়েছে, রোববার রাত আনুমানিক ২টা থেকে ভোরে যে কোনো সময় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা সাইফুর রহমানের কক্ষে ঢুকে পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এরপর তারা ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে যান।