‘মসজিদে অজু করার পানিও পাচ্ছি না’

চট্টগ্রামে পানি সংকট নিরসনের দাবিতে ওয়াসা ভবন ঘেরাও করেছে বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ বাসিন্দা। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি ওয়াসার হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওয়াসা কার্যালয়ের সামনে ধনিয়ালাপাড়া, দেওয়ানহাট, সুপারিওয়ালাপাড়া, পানওয়ালাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেন। পরে তারা একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি পালন করে যাবেন। ওয়াসা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নগরবাসী জানান, ওয়াসার পানির সংকট সব সময়ই থাকে। অন্য সময় কোনোমতে মানা গেলেও রমজান মাসে তা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ওয়াসার পানির অভাবে আমাদের জীবন দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এখানে দুর্ভোগের আরেক নাম ওয়াসার পানি। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই। নগরের ২৩ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু জাফর বলেন, আমরা অনেক দুর্ভোগের শিকার হয়ে ওয়াসা ভবন ঘেরাও করতে এসেছি। এ রমজানেও মসজিদে অজু করার পানি পাচ্ছি না। ঘরে রান্না কিংবা খাবারের পানিও নেই। যে কারণে বাধ্য হয়ে পানির সমস্যা সমাধানের দাবিতে ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে এসেছি। পানি সমস্যার সমাধানে কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এ কর্মসূচি পালন করে যাব। ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাতে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) একটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চলাকালে সাগরিকা এলাকায় ১১০০ এম এম ব্যাসের প্রধান সঞ্চালন লাইনের পাইপ ফুটো হয়ে যায়। এতে করে অন্তত ১৮ এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত এই সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে হালিশহর এলিভেটেট ট্যাঙ্ক হয়ে আগ্রাবাদ বা/এ, সিডিএ আ/এ, পশ্চিম মাদারবাড়ি, হালিশহর, বড়পুল, ছোটপুল, বেপারিপাড়া, গোসাইলডাঙ্গা, পানওয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, ধনিওয়ালাপাড়া, কদমতলী, হাজীপাড়া, শান্তিবাগ, মুহুরীপাড়া, পাহাড়তলী, ঈদগাঁ, দেওয়ানহাটসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, হালিশহরে যে ট্যাঙ্কে পানি রেখে আমরা পানি সরবরাহ করি, সেখানে পানি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য হালিশহর, আগ্রাবাদ, সিডিএ, দেওয়ানহাট ও আশপাশের এলাকায় পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। মেরামত কাজ চলছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা পানি সরবরাহ সচল করতে পারব। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, সাগরিকা মোড়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১১০০ এম এম ব্যাসের প্রধান সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশকিছু এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, রোজার চার দিন আগে একবার প্রধান সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটাও বড় ধরনের ক্ষতি। মেরামত করতে প্রায় সাত থেকে আটদিন লেগেছে। এখন আরও একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমরা আশা করছি, দ্রুত লাইনটি মেরামত শেষে চালু করতে পারব। এরপর পানি সরবরাহ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হবে। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের অনন্যা আবাসিক সংলগ্ন এলাকায় কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলাকালে ওয়াসার ৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের সরবরাহ পাইপলাইন ফেটে যায়। তখন নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, মাদারবাড়ী, দেওয়ানহাট, লালখান বাজার, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ বোস্তামি, নাসিরাবাদ, মুরাদপুর, কদমতলী, বহদ্দারহাট, কুয়াইশ, জামালখান, চকবাজার, আন্দরকিল্লা ও সংলগ্ন এলাকাসহ শহরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন প্রায় পাঁচ দিন পর পানি সরবরাহ শুরু হয়। সব এলাকায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে গিয়েছিল।