‘জাফর এক্সপ্রেসে’ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, যা বলছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ‘জাফর এক্সপ্রেসে’ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আইএসপিআর মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে যে, সন্ত্রাসীরা ট্রেনটিকে ৮ নম্বর টানেলের মধ্যে আটকে রেখে যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ট্রিবিউন জানিয়েছে, প্রত্যন্ত ও কঠিন ভূখণ্ডের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেছে এবং জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করেছে। জিম্মিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ও শিশু রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, সন্ত্রাসীরা তাদের বিদেশি সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আইএসপিআর জানিয়েছে, ‘এ অভিযান চলবে যতক্ষণ না সব সন্ত্রাসী ধ্বংস হয় এবং সব জিম্মিকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।’ নিরাপত্তা বাহিনী নিরীহ যাত্রীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো এ হামলাকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বলেছে, সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড ইসলাম, পাকিস্তান বা বেলুচিস্তানের স্বার্থের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়। অভিযানের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে পরে জানানো হবে বলে জানানো হয়েছে। আইএসপিআর নিশ্চিত করেছে, জাফর এক্সপ্রেসে হামলাকারী সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে অবস্থানরত তাদের মাস্টারমাইন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। নিরাপত্তা সূত্র আরও জানায়, সন্ত্রাসীরা নারী ও শিশুদের ‘হিউম্যান শিল্ড’ বা মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যা অভিযানকে আরও জটিল করে তুলছে। দুর্গম অঞ্চল ও মানবঢালের কৌশলকে মাথায় রেখে সাবধানতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের নিঃশেষ না করা পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। হামলার পরপরই ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিরাপত্তা সূত্র। হামলার পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং রাষ্ট্রবিরোধী অ্যাকাউন্টগুলো ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পুরোনো ভিডিও, এআই-জেনারেটেড কনটেন্ট, পুরোনো ছবি, ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা ও পোস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সামাজিক মাধ্যমে একপ্রকার বিদ্বেষমূলক প্রচারণার অংশ। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ভারতীয় গণমাধ্যমকে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জনগণকে প্রমাণিত ও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। হামলার পরপরই বেলুচিস্তান সরকার জাফর এক্সপ্রেসে ভয়াবহ গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। সিবি হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং অ্যাম্বুলেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তবে বেলুচিস্তানের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ জানিয়েছেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে বিভাগ উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তার জন্য আরও ট্রেন পাঠিয়েছেন।’ রিন্দ আরও বলেন, ‘এ হামলার প্রকৃতি ও সম্ভাব্য সন্ত্রাসী সংশ্লিষ্টতা নির্ধারণ করা হচ্ছে। বেলুচিস্তান সরকার জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি এ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘যেসব সন্ত্রাসী নিরীহ যাত্রীদের ওপর গুলি চালায়, তারা কোনো ধরনের সহানুভূতির যোগ্য নয়।’ তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা এবং অভিযানে সফলতার আশা প্রকাশ করেন।