২৪ ঘণ্টা ব্যবধানে পঞ্চগড়-সিলেট সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে হত্যা

৯ মার্চ, ২০২৫ | ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা-নির্যাতন বন্ধের বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যত বাংলাদেশ-ভাতর সীমান্তে বেপরোয়া আচরণ করছে বিএসএফ। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা সীমান্তে গেলেই বিএসএফয়ের গুলিতে মৃত্যুর পাশাপাশি শিকার হচ্ছেন নানা নির্যাতনে। এবার পঞ্চগড়ের ভিতরগড় সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে আল-আমিন (৩৬) নামে এক বাংলাদেশি যুবকে হত্যা করেছে। শনিবার ভোরে সদর উপজেলার কাজীরহাটের উত্তর তালমা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আল-আমিন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হারিভাষা ইউনিয়নের জিন্নাতপাড়া গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে শাহেদ আহমদ (২৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। নিহত শাহেদ কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর ছেলে। বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় আল-আমিন কাজীরহাটের উত্তর তালমা এলাকায় ভারতীয় সীমান্তের কাছে গেলে বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আল আমিন নিহত হন। এরপর বিএসএফ তার লাশ ভারতে নিয়ে যায়। বিজিবি জানায়, শনিবার ভারতের অভ্যন্তরে ভাটপাড়া নামক স্থানে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আল আমিন। বিষয়টি জানার পর সকালে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা সীমান্ত পিলার ৭৪৪/৭-এস এলাকায় ভারতের ৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেন। বৈঠকে এ ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে লাশ ফেরতের আহ্বান জানান। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আল আমিনের লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ। সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, শুধু কিশোরী ফেলানী, স্বর্ণা, জয়ন্ত বা আল-আমিন নয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নিয়মিত বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষকে সীমান্তে গুলি করে বা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করছে। যখন ভাগ-বাঁটোয়ারায় মেলে না, তখন বিএসএফ হত্যা করে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসএফ নিরীহ ও নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। এ সব হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে সরকারকে সোচ্চার হতে হবে। ভারতকে কড়া বার্তা দিয়ে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করতে হবে। শক্তিশালী, আপোষহীন পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। সীমান্ত হত্যা প্রশ্নে ভারতকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। প্রতিটি হত্যাকা-ের জন্য ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতে হবে। সব হত্যাকা-ের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার জন্য এভাবে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারলে নিঃসন্দেহে তার সুফল মিলবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান বলেন, ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যদি বহাল রাখতে হয়, সে ক্ষেত্রে এমন কোনো কার্যক্রম মেনে নেয়া উচিত নয়, যেটা মানবাধিকারের দৃষ্টিতে অচল। দুই দেশের সীমান্ত যেভাবে ভাগ করা হয়েছে, সেখানে ভিটেমাটি, আত্মীয়স্বজন দুই দেশে। ফলে সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময়ও দুই দেশের মানুষ আসা-যাওয়া করে। হাট-বাজার, হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তারা নির্ভরশীল। এমন একটা পরিস্থিতিতে সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে। সূত্র জানায়, সিলেট সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে শাহেদ আহমদ (২৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। নিহত শাহেদ কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর ছেলে। ভারতের সীমান্তরক্ষী-বিএসএফের সহায়তায় মেঘালয় রাজ্য পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তাদের হেফাজতে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে তিনি বাড়িতে ফিরে না এলে শুক্রবার সকাল থেকে শাহেদ আহমদের পরিবারের লোকজন ও স্বজনেরা তাকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন শাহেদের গুলিবিদ্ধ লাশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের লাইজুরী বাঁশকোনা এলাকার ১৩১৯ নম্বর পিলারের অভ্যন্তরে পড়ে রয়েছে। এটি বিজিবির ১৯ ব্যাটালিয়নের আওতাভুক্ত এলাকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবার সূত্রের বরাত দিয়ে বিজিবির ১৯ ব্যাটালিয়ন জানায়, শাহেদ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ভারতে প্রবেশ করে এবং একপর্যায়ে ভারতীয় (খাসিয়া) চোরাকারবারিদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়। তখন তাদের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি বিজিবি বিএসএফকে অবগত করলে বিএসএফ একজন মৃত ব্যক্তির স্থিরচিত্র প্রেরণ করে এবং স্থিরচিত্রটি শাহেদ মিয়ার বলে তার পরিবার নিশ্চিত করে। লাশ আনতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএসএফ সংশ্লিষ্ট ভারতীয় খাসিয়া নাগরিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। নিহত শাহেদের বড় ভাই আশিক বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শাহেদ যেতে চায়নি। জাকারিয়া নামের একজন বাড়িতে গিয়ে তাকে নিয়ে যায়। আশিক আরো জানান, তার মামা গিয়ে শাহেদের লাশ দেখেছেন। বুকে গুলি, কানের পাশে গুলির মতো চিহ্ন রয়েছে। কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে তারা লাশ হস্তান্তর করবে। আমাদের টিম বিজিবির সহযোগিতায় কাজ করছে।