ভোজ্যতেলের সংকট: চট্টগ্রামে কাজ হচ্ছে না ডিসির হুঁশিয়ারিতেও

৬ মার্চ, ২০২৫ | ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

জেলা প্রশাসকের (ডিসি) হুঁশিয়ারির পরও চট্টগ্রামের বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট কাটার কোনো লক্ষণ নেই। বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিন তেল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না খুচরা দোকানিদের কাছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাওয়া গেলেও বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। বড় বড় বাজারে অভিযানের ভয়ে দোকানদাররা গায়ের দামে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করলেও নগরীর অলিগলি কিংবা উপজেলার গ্রামগঞ্জে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা সয়াবিনের দাম পাইকারিতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও কমে বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সমস্যার মূলে না গিয়ে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা বা ভয় দেখানো কাম্য নয়। তারা প্রশাসনকে সহায়তা করতে সব সময় প্রস্তুত। তারা বলেন, বড় দুটি গ্রুপ তেল উৎপাদন ও সরবরাহ থেকে দূরে থাকা, এলসি জটিলতায় যথাসময়ে তেল আমদানি না হওয়া, বোতলের উৎপাদন কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের কাছে যে তেল রয়েছে তার দাম বাড়িয়ে দিলেও গণহারে সব ব্যবসায়ী এজন্য দোষী নয়। জানা গেছে, চট্টগ্রামে রোজার অন্তত দুই মাস আগে থেকেই ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। প্রতিদিনই লাফিয়ে বেড়েছে দাম। লিটারে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। নিকট অতীতে এ ধরনের দাম বৃদ্ধির নজির নেই। ভোক্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় হাহাকার। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ব্যবসায়ীদের নিয়ে চার দফা বৈঠক করে সয়াবিনসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অনুরোধ জানান। সর্বশেষ সোমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রকে নিয়ে খাতুনগঞ্জ পরিদর্শনে গিয়ে স্বচক্ষে ভোজ্যতেলের সংকটের চিত্র দেখেন। এই পরিস্থিতিতে তারা মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতাদের পাশাপাশি আমদানিকারকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে টাস্কফোর্সের সভা করেন। এই সভায় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, চার দফা বৈঠক করার পরও রমজানে ভোজ্যতেলের সংকট থেকে যাওয়া এবং সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়াটা দুঃখজনক। এবার তিনি দেখতে চান, রাষ্ট্রের শক্তি বেশি না ব্যবসায়ীদের শক্তি। তেলের সাপ্লাই যদি পর্যাপ্ত না হয় তবে গুদাম পর্যায়ে অভিযান চালানো হবে বলে হুঁশিয়ার করেন। বলেন, এই মিটিংই শেষ মিটিং। তিনি এও বলেন, টিকে গ্রুপ বা সিটি গ্রুপের মতো গ্রুপের মালিকদের যদি জেলে ভরে দেওয়া হয় তাহলে তাদের কি সম্মান থাকত। তিনি প্রয়োজনে ছাত্র সমন্বয়কদেরও কাজে লাগাবেন বলে হুঁশিয়ার করেন। তিনি বলেন, কীভাবে ভোক্তা তেল পাবে সেই ব্যবস্থা করেন। না হয় রাষ্ট্রীয় পদ্ধতি অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসায়ীদের যে সম্মানের জায়গা রয়েছে তা কাজের মাধ্যমে রক্ষা করার জন্যও আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, বোতলজাত সয়াবিন সংকটের নেপথ্যে বোতল উৎপাদন না হওয়াটাও একটা কারণ। লাইসেন্সবিহীন অনেক কারখানা বোতল উৎপাদন করে তা বাজারজাত করতেন। খোলা সয়াবিন কিনে ডিলার বা ব্যবসায়ীরা তা বোতলজাত করে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের ট্যাগ বা লেবেল লাগিয়ে বাজারে ছাড়ত। কিন্তু বোতল সংকটের কারণে সয়াবিন বোতলজাত করে বাজারে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, বারবার কেন খাতুনগঞ্জকে টার্গেট করা হয় জানি না। অথচ বড় বড় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই এখন ঢাকায় ব্যবসা করেন। আর এখানকার ব্যবসায়ীরা ডিলার বা পাইকার হিসাবে তাদের পণ্য বিক্রি করেন। গোড়ায় হাত না দিলে সংকটের সমাধান হবে না। একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান চৌধুরী বলেন, মুনাফালোভী, অসাধু-এসব অপবাদ নিয়ে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের পথ চলতে হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যখন কোটি কোটি টাকা লোকসান দেয় তখন সরকার বা অন্য কেউ এগিয়ে আসে না। সিন্ডিকেট করলে কেবল সয়াবিনে কেন অন্য পণ্যেওতো করা যেত। রমজানের অন্যতম প্রয়োজনীয় পণ্য চিনি, চনাবুট, খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক কম। বাজার মনিটরিংয়ে মেয়র শাহাদাত : মঙ্গলবার টাস্কফোর্সের বৈঠকে নির্ধারণ করে দেওয়া দাম অনুযায়ী বাজারে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে কাজির দেউড়ি বাজার পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বেশ কয়েকটি খুচরা দোকানে বোতলের গায়ে লেখা দামে বোতলজাত সয়াবিন এবং নির্ধারিত দামে খোলা সয়াবিন বিক্রির বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় তিনি নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে তেল বিক্রি বা মজুতদারি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে প্রশাসন কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে দোকানদারদের হুঁশিয়ার করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব আশরাফুল আমিন ও ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা।