একাত্তরে ঝাঁপিয়ে পড়ি উনসত্তরের অনুপ্রেরণায়

৪ মার্চ, ২০২৫ | ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সময়টা ছিল উত্তাল। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯। পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহিদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা এবং রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নুরুল ইসলাম। রাজশাহীতে এ দুজনের আত্মত্যাগ আমাকে বিদ্রোহী করে তোলে। তাদের জীবনদানের উৎসাহ আমাকে অনুপ্রাণিত করে ১৯৭১-এর মার্চে। নেমে পড়ি সম্মুখযুদ্ধে। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় মার্চের শুরুতেই আমি গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহে চলে যাই। আমাদের গ্রামটি ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা সীমান্তে। মার্চের শেষ সপ্তাহে একদিন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে ফরহাদ আলী এবং স্বপন ভাইসহ কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করছিলেন। আমিও এ সময় তাদের সঙ্গে ভারতে চলে যাই। সাত নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর গিয়াসের অধীনে লালগোলা হাইস্কুলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নিই। এ সেক্টরের চিফ মেডিকেল অফিসার ছিলেন রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারির বাসিন্দা ডা. এমদাদ। তিনিও আমাদের তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেন। এরপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে চাকুলিয়া ক্যান্টনমেন্টে চলে যাই। এখানে আমরা ২৮ দিন প্রশিক্ষণ নিই। প্রশিক্ষণ শেষে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পে আসি। জুনের দিকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জাতিসংঘের একটি টিম দেশে আসে। এ সময় দেশে যুদ্ধাবস্থা জানান দেওয়ার জন্য আমরা প্রথম ভারত থেকে দেশে অপারেশনের জন্য প্রবেশ করি। আমাদের ১৫ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার একটি দল প্রথম রাজশাহী মহানগরীর সোনাদিঘি পানির পাম্প এবং পার্শ্ববর্তী বিদ্যুৎভবনে অপারেশন চালাই। সফল অপারেশন শেষে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত চলে যাই। এরপর রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের অভয়া সেতু, তানোর থানা, মোহনপুরের রাজাকার-আলবদর ক্যাম্পসহ অনেক স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। অভয়া সেতুতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় তাদের আধুনিক মারণাস্ত্রের সামনে আমরা টিকতে পারিনি। জীবন নিয়ে আমরা ফিরেছি। তবে একবুক পানির নিচে অস্ত্র পড়ে গেলেও মনের অদম্য সাহস নিয়ে সেটি উদ্ধার করেছি। শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে আমরা মাথানত করিনি। একাত্তরের ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হলে আমরা ফিরে আসি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় সম্পদে পরিণত করেছে। ১৯৭৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুনর্গঠিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করার জন্য বেশি সময় পাননি। খালেদা জিয়াও মুক্তযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশে মহান একাত্তরে জনযুদ্ধ হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছেন। দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানিতে আমরা মানচিত্র পেয়েছি। চব্বিশে একটি ব্যতিক্রমী আন্দোলন। এ আন্দোলনে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন, তাদের আমরা সম্মান করি। আমরা বৈষম্য নিরসন চাই। মৃত্যুর আগে একটাই স্বপ্ন-বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে ওঠুক। বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খোকা সাবেক কমান্ডার, রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ