৫৪ বছরেও মেলেনি পর্যটনকেন্দ্রের স্বীকৃতি

৩ মার্চ, ২০২৫ | ৫:০২ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাজশাহীর বাঘা শাহী মসজিদ ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ৫০০ বছর আগে বাংলার স্বাধীন সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন। কারুকার্যখচিত এ মসজিদ প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যকলার ঐতিহাসিক নিদর্শন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সদরে ১৫২৩-২৪ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরি-৯৩০) নির্মিত মসজিদটি আজও আপন মহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালে ৫০০ বছর পূর্ণ হওয়া মসজিদটির ছবি বাংলাদেশের ৫০ টাকার পুরোনো নোট আর ১০ টাকার স্মারক ডাকটিকিটে দেখা মেলে। স্থানীয়রা জানায়, মসজিদটির স্থাপত্যশৈলীর আকর্ষণে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন। প্রায় সারা বছর পর্যটকদের আনোগোনা থাকে। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে বাঘা উপজেলা সদরে এটি অবস্থিত। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ঐতিহাসিক এ মসজিদকে কেন্দ্র করে বাঘাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ঘোষণার। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ৫৪ বছরেও এর স্বীকৃতি মেলেনি। ঐতিহাসিক সূত্র জানায়, হোসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরত শাহ বিপুল অর্থ ব্যয় করে পদ্মা নদীর তীরবর্তী বাঘায় শাহী মসজিদ নির্মাণ করেন। হোসেন শাহী শাসনামলকে বাংলার মুসলমান শাসনের স্বর্ণযুগ বলা হয়। শাসকরা উদারভাবে বাংলা শাসন করেন। এ আমলে বাংলায় সাংস্কৃতিক নবজাগরণের উন্মেষ ঘটে। সমৃদ্ধ হয় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি। হোসেন শাহী শাসকরা বাংলায় মুসলিম সংস্কৃতি ও স্থাপত্যকলার প্রসারে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এ কারণে ১৪৯৪ থেকে ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ের হোসেন শাহী বংশের শাসনামলকে বাংলার শ্রেষ্ঠ শাসন বলেও গণ্য করা হয়। বাঘার শাহী মসজিদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদসহ বহু প্রাচীন স্থাপনা আজও হোসেন শাহী বংশের স্থাপত্যকলার সাক্ষ্য বহন করে। বাঘার শাহী মসজিদ ও কমপ্লেক্স ২৫৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। মসজিদের প্রাঙ্গণ সমতলভূমি থেকে ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। উত্তর পাশের ফটকের ওপরের স্তম্ভ ও কারুকাজ ধ্বংস হয়ে গেছে। ১০টি গম্বুজ রয়েছে। ভেতরে ছয়টি স্তম্ভ। মসজিদে চারটি মেহরাব আছে। যা বিশেষ কারুকার্যখচিত। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট, উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। দেওয়াল চওড়া ৮ ফুট, গম্বুজের ব্যাস ৪২ ফুট, উচ্চতা ১২ ফুট। চৌচালা গম্বুজের ব্যাস ২০ ফুট, উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। গাঁথুনি চুন-সুরকি-পাথর দিয়ে নির্মিত। মসজিদের ভেতরে ও বাইরের দেওয়ালে মেহরাব ও স্তম্ভ রয়েছে। মাঝখানের দরজার ওপর ফার্সি ভাষায় লেখা শিলালিপি রয়েছে। বাঘা শাহী মসজিদের চারপ্রান্ত প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের দুদিকে দুটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদের ভেতরে-বাইরে সর্বত্রই টেরাকোটার নকশা বিদ্যমান। পাশে বিশাল দিঘি। একটিও দর্শনীয় স্থান। পাশে রয়েছে মাজার শরিফ। আছে নারী মসজিদও। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের ছেলে নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ জনকল্যাণার্থে মসজিদের সামনে ৫২ বিঘা আয়তনের দিঘি খনন করেন। দিঘির চারপাশে সারিবদ্ধ নারকেল গাছ। প্রতিবছর শীতে দিঘিতে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে। কলতানে পুরো এলাকাটি মুখরিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে দিঘিটির চারটি বাঁধানো পাড় নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদসংলগ্ন জহর খাকী পিরের মাজার। মসজিদসংলগ্ন এলাকায় প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ১৫ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলাটি ৫০০ বছরের ধারাবাহিকতায় আজও অব্যাহত রয়েছে। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, প্রায় ৫০০ বছর আগে পাঁচজন সঙ্গীসহ সুদূর বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য বাঘায় এসেছিলেন সুফিসাধক হজরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রহ.)। এ সময় অন্য ধর্মাবলম্বীরা তার কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে ওয়াকফ এস্টেটের সাবেক মোতওয়ালি খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম রইশ বলেন, মসজিদের ভেতরে প্রবেশপথের ওপরে ফারসি ভাষায় পাথরেখচিত শিলালিপিটি এক সময় চুরি হয়ে যায়। অবশ্য পরে শিলালিপিখচিত পাথরটি মসজিদের ভেতরে রেখে যায়। বাঘা শাহী মসজিদ কমপ্লেক্সের সহকারী কাস্টোডিয়ান দবির হোসেন বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ শাহী মসজিদকে ঘিরে ছড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোকে তালিকাভুক্ত করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দাবিগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।