উত্তরাখণ্ডে তুষারধসে নিহত বেড়ে ৮

২ মার্চ, ২০২৫ | ৯:৫০ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ভারতের উত্তরাখণ্ডের দুর্গম অঞ্চলে ভয়াবহ তুষারধসের ঘটনায় ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। রোববার এই প্রাণঘাতী দুর্যোগে উদ্ধার অভিযান শেষ হয়, যা হিমশীতল তাপমাত্রার মধ্যে গত তিনদিন ধরে চলছিল। গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চামোলি জেলার মানা গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় তিব্বত সীমান্তের কাছে একটি নির্মাণ শিবিরে এই তুষারধসের ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক তুষার ও ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়েন। প্রথমে ঘটনাস্থলে ৫৫ জন শ্রমিক থাকার কথা বলা হলেও পরে সংশোধিত তথ্য অনুযায়ী, ৫৪ জন শ্রমিক ছিলেন। কারণ একজন দুর্ঘটনার আগেই নিরাপদে নিজের বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। বেঁচে ফেরা শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা এ দুর্ঘটনায় উদ্ধারকৃত ৫০ জনের মধ্যে চারজন পরে আহত অবস্থায় মারা যান। সেনাবাহিনী ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিখোঁজদের সন্ধান চালায়। পাশাপাশি ডগ স্কোয়াডও উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করে। উদ্ধার হওয়া শ্রমিক অনিল সংবাদমাধ্যমকে বলছিলেন, ‘ঠিক যেন ঈশ্বরের দূতরা এসে আমাদের উদ্ধার করেছে। আমরা তুষারের নিচে এমনভাবে আটকা পড়েছিলাম যে, বেঁচে থাকার কোনো আশাই ছিল না। এখন মনে হচ্ছে, যেন স্বপ্ন দেখছি’। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে (স্থানীয় সময়) তুষারধসটি ঘটে। তখন বেশিরভাগ শ্রমিক ঘুমিয়ে ছিলেন। আর কয়েকজন অস্থায়ী টয়লেটে ছিলেন। হঠাৎ ভূমি কেঁপে ওঠে এবং তাদের স্টিলের কন্টেইনারগুলো বরফে ঢাকা পড়ে ও ধীরে ধীরে পিছলে যেতে থাকে’। অনিল আরও বলেন, ‘প্রথমে আমরা বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটছে। কিন্তু যখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, চারপাশে শুধু বরফের স্তূপ দেখলাম। আমাদের কন্টেইনারের ছাদও ভেতরের দিকে বাঁকতে শুরু করে’। ওই সময় তাদের চিৎকার শুনে কয়েকজন বের হতে সক্ষম হলেও অনেকেই আটকা পড়ে যান। উদ্ধার পাওয়া ভিপিন কুমার জানান, তিনি যখন নিজেকে বরফের গভীরে অক্সিজেনের জন্য লড়াই করতে দেখেন, তখন তার মনে হয়েছিল, ‘এটাই বুঝি শেষ’। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘আমি এক প্রচণ্ড গর্জন শুনলাম, যেন বজ্রপাত হচ্ছে… তারপর সব অন্ধকার হয়ে গেল’। জানা গেছে, এখানকার উচ্চতা ৩,২০০ মিটারেরও বেশি। যেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। ধন সিং বিষ্ট নামে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের আরেকজন জানান, তার ছেলে ও ভাইপোকে বাঁচাতে পারায় তিনি উদ্ধারকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। হিমালয়ে ক্রমবর্ধমান বিপদ হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে শীত মৌসুমে তুষারধস ও ভূমিধসের ঘটনা খুবই সাধারণ। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন আবহাওয়া সম্পর্কিত ঘটনাগুলোকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। এছাড়া হিমালয় অঞ্চলে দ্রুত উন্নয়ন, বন উজাড় এবং অতিরিক্ত নির্মাণ কাজও বিপদ বাড়িয়ে তুলছে। এর আগে, ২০২১ সালে উত্তরাখণ্ডে একটি বিশাল হিমবাহ ভেঙে নদীতে পড়ে বন্যা সৃষ্টি করলে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়। তারও আগে ২০১৩ সালে ভয়াবহ বর্ষা বন্যা ও ভূমিধসে ৬,০০০ জনের মৃত্যু ঘটে। যা ওই অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনার দাবি তোলে। সূত্র: এএফপি ও ডন