ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৩ ধরনের অপরাধী, বিনিময় হয় টার্গেট

রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ছিনতাই। এতে নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ। রাজধানীর ৫০ থানা এলাকায় ছিনতাইকারীদের ৪৩২টি হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে। দিন-রাত কোনো সময়ই নিরাপদ নন নগরবাসী। বিশেষ করে রাতে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এসব স্থানে সক্রিয় ১২শ ছিনতাইকারী। ছিনতাইয়ে তিন ধরনের অপরাধী জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, রাজধানীতে ছিনতাইয়ের সঙ্গে তিন ধরনের অপরাধী জড়িত। একদল পেশাদার ছিনতাইকারী। এরা সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাই করে। এদের প্রত্যেক গ্রুপে ৪ থেকে ৫ জন সদস্য থাকে। কখনো তারা নির্দিষ্ট স্পটে অবস্থান করে ছিনতাই করে। আবার কখনো সিএনজি কিংবা প্রাইভেটকার নিয়ে দিনে বা রাতে ঘুরে ঘুরে ছিনতাই করে। এদের মধ্যে ছিনতাইয়ের টার্গেট বিনিময় হয়। এক এলাকার টার্গেট অন্য এলাকার ছিনতাইকারীর কাছে বিক্রির নজির আছে বহু। আরেক ধরনের ছিনতাইকারী রয়েছে, যারা মাদকের টাকা জোগান দিতে ছিনতাইয়ে নেমে পড়েছে। এদের অধিকাংশই ভাসমান কিংবা বস্তির বাসিন্দা। এরা রাস্তাঘাটে ওতপেতে থাকে। বিভিন্ন পরিবহণের যাত্রী কিংবা পথচারীর মোবাইল ফোন, কানের দুল, ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। আরেক ধরনের ছিনতাইকারী রয়েছে, যারা শৌখিন হিসাবে পরিচিত। এদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বখে যাওয়া শিক্ষার্র্থীও আছে। এরা শখের বসে ছিনতাইয়ে নামে। দামি মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ানো এসব অপরাধীরা টার্গেটের ল্যাপটপ কিংবা দামি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এক সময় ছিনতাইকারীরা রাতের অন্ধকারে বা ভোরে রাস্তায় নেমে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিত। কিন্তু এখন ভোর, সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত সব সময় তাদের দাপট চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধীরা যেমন কৌশল পালটে অপরাধ করছে, তেমনি তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও কৌশল পালটে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে পেশাদার ছিনতাইকারীর পাশাপাশি মাদকাসক্ত এবং অভাবগ্রস্তরাও জড়িয়েছে। তিনি বলেন, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো ভূমিকার বিকল্প নেই। ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএম নাজমুস সাকিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক শূন্যতা তৈরি হয়েছে পুলিশের মধ্যে। দেশে বড় পরিবর্তনের পর এই সময়ে অপরাধীরা এই সুযোগ নিয়ে ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধে তৎপরত হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে পুলিশকে পুনরুজ্জীবিত করার যথাযথ উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গত এক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল। গত কয়েক দিনের ছিনতাই কিছুটা বেড়েছে। তবে অন্যান্য অপরাধ নেই বললেই চলে। সব অপরাধ আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ মুহূর্তে আমাদের মূল কাজ ছিনতাইকারীদের দমন করা। ঢাকা মেট্রোলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, পুলিশের কাছে হটস্পট বলে কিছু নেই। যেই এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়, সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে।