প্রথমবারের মতো তিন ডিসপ্লের ফোল্ডিং ফোন আনল হুয়াওয়ে

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়েকে একের পর এক বিধি-নিষেধ আরোপ করেও যেন থামাতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। এবার বিশ্বকে তাক লাগিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ববাজারে তিন ডিসপ্লের ফোল্ডিং ফোন নিয়ে আসল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। ফোনটিকে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানির একটি প্রতীকী বিজয় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার একটি বৈশ্বিক লঞ্চ ইভেন্টে এই ট্রাই-ফোল্ড (তিন ভাঁজের) স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে হুয়াওয়ে। তবে মূল্য, স্থায়িত্ব, সরবরাহ ও অ্যাপের সমস্যার কারণে ফোনটির সফলতায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কুয়ালালামপুরে একটি ইভেন্টে হুয়াওয়ে জানিয়েছে, হুয়াওয়ে মেট এক্সটি মডেলের এই ফোনটির দাম হবে ৩ হাজার ৪৯৯ ইউরো (প্রায় ৩ হাজার ৬৬২ ডলার)। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও এটি ট্রাই-ফোল্ড হিসেবে পরিচিত, তবে এতে তিনটি ছোট প্যানেল রয়েছে এবং এটি দুটি ধাপে ভাঁজ হয়। এই ফোনটি পাঁচ মাস আগে প্রথম চীনের বাজারে উন্মোচন করা হয়েছিল। হুয়াওয়ের দাবি, এটি বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ফোল্ডেবল ফোন, যার পুরুত্ব মাত্র ৩.৬ মিলিমিটার (০.১৪ ইঞ্চি) এবং এর স্ক্রিনের আকার ১০.২ ইঞ্চি। অর্থাৎ ফোনটি ভাঁজ খুললে এর স্ক্রিনের আকার অ্যাপলের আইপ্যাডের সমান হবে। চীনের প্রথম বৈশ্বিক প্রযুক্তি ব্র্যান্ড হিসেবে হুয়াওয়ে পরিচিত। বর্তমানে এটি মার্কিন-চীন বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ের প্রযুক্তি অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয়, যার মধ্যে গুগল সার্ভিসেস ও অন্যান্য স্মার্টফোন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর ফলে, হুয়াওয়ের ফোন আন্তর্জাতিক বাজারে কম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যদিও হুয়াওয়ে এই দাবি অস্বীকার করেছে। চীন সরকার দাবি করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার অজুহাতে হুয়াওয়েকে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতা থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর, হুয়াওয়ে চীনে মেট এক্সটি উন্মোচন করে, একই দিনে অ্যাপল তাদের আইফোন ১৬ সিরিজ বৈশ্বিক বাজারে ছাড়ে। তবে ‘মেট এক্স’ এর উচ্চ দাম তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কুয়ালালামপুরে এক উন্মোচন অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ে আরও কিছু নতুন ডিভাইস প্রকাশ করেছে, যেমন মেটপ্যাড প্রো ট্যাবলেট, ফ্রি আর্ক (হুয়াওয়ের প্রথম ওপেন-ইয়ার ইয়ারবাডস), এবং অন্যান্য পরিধানযোগ্য ডিভাইস। গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেন্ডফোর্সের বিশ্লেষক রুবি লু বলেন, যদিও হুয়াওয়ে অত্যাধুনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শন করছে, তবুও এর দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশেষত বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন সংকট, চিপের অভাব এবং সফটওয়্যার ইকোসিস্টেমের সীমাবদ্ধতার কারণে। তিনি বলেন, গুগল মোবাইল সার্ভিসের অভাবের মতো সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা আন্তর্জাতিক বাজারে হুয়াওয়ের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আইডিসির ব্রায়ান মা জানান, ২০২৪ সালে চীনে ফোল্ডেবল ফোনের বাজারে ৪৯ শতাংশ শেয়ার নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে হুয়াওয়ে, তবে বিশ্বব্যাপী বাজারে হুয়াওয়ের শেয়ার ২৩ শতাংশ, যেখানে স্যামসাং ৩৩ শতাংশ শেয়ার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। আইডিসি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ২০২৮ সালের মধ্যে ফোল্ডেবল ফোনের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ২০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪৫.৭ মিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছাবে। বিশ্লেষক রুবি লু আরও বলেন, যদিও অনেক বড় ব্র্যান্ড ফোল্ডেবল ফোন বাজারে প্রবেশ করেছে, এখন পর্যন্ত অ্যাপল ফোল্ডেবল ফোন বাজারে প্রবেশ করেনি। যদি অ্যাপল এই বাজারে প্রবেশ করে, তবে এটি ফোল্ডেবল ফোন সেক্টরের আরও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।