‘ভোট এলেই ওরা আশ্বাস পায়, এরপর সবাই ভুলে যায়’

দেশের চিরচেনা মৃৎ শিল্প এখন প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে বিলুপ্তির পথে। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মীরসরাইয়েও মৃৎ শিল্পীদের ঘরে ঘরে হাহাকার নেমে এসেছে। ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট। মীরসরাইয়ের বিভিন্ন কুমারপাড়ার বাসিন্দাদের জীবনে দুর্দিন নেমে এসেছে। তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। অনেকে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া নতুনভাবে যোগ হয়েছে মাটি ও পুঁজি সংকট। মীরসরাইয়ের প্রাচীনতম সবচেয়ে বড় কুমার পাড়াটি ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ছত্তরুয়া গ্রামে অবস্থিত। ওই পাড়ায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত অর্ধশতাধিক কুমার পরিবার। যারা শুধু মাটির জিনিসই তৈরি করেন। সম্প্রতি সরেজমিনে ওই কুমার পাড়ায় গিয়ে জানা গেছে কুমার-কুমারী ও তাদের পরিবার পরিজনের কষ্টের কাহিনী। পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া এই পেশা ধরে রাখতে এখনো লড়াই করে যাচ্ছেন তারা। আগে মাটির কলস, পূঁজার ঘট, থালা-বাসনসহ অনেক কিছু তৈরি করা হতো। কিন্তু চরকা ঘোরানোর লোক থাকায় এখন পিঠা তৈরির খোলা ছাড়া আর কিছুই তৈরি করেন না তারা। কথা হয় কুমার পাড়ার বাসিন্দা অনিল চন্দ্র পালের সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাবা সুরেশ চন্দ্রের হাতেখড়িতে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করা শিখেছেন তিনি। তাদের মাটির তৈজসপত্র তৈরির একটি চরকাও রয়েছে। চরকাটি কেবল তার বাবাই চালাতে জানতেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে তার বাবা মারা যাওয়ার পর চরকাটি আর ঘোরানো হয় না। ফলে এখন শুধু পিঠা তৈরির খোলা বানানো হয়ে থাকে। প্রতিটি খোলা পাইকারি ২০ টাকা করে বিক্রি করেন। পল্লীর বাসিন্দা মিলন পাল বলেন, আমরা অনেক সংকটে রয়েছি। বর্তমানে আমাদের মাটি নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। সব ধরণের মাটি দিয়ে তো আর তৈজসপত্র তৈরি করা যায় না। তাই অন্য জায়গা থেকে এই মাটি কিনে আনার সময় পুলিশ গাড়ি আটকে রাখে। বিষয়টি কয়েক বছর আগে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তার দেওয়া তথ্য মতে, বিভিন্ন সংকটের কারণে দুই শতাধিক বছরের পুরোনো এই শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তের পথে। মাটি ও পুঁজির যোগান দিতে স্বল্প সুদে ঋণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি আবেদনও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা শিউলি রানী পাল জানান, বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন যখন সামনে আসে তখন প্রার্থীদের নানান প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভাসে পুরো কুমার পাড়া। কুমার পাড়ার সচেতন মানুষের দেওয়া বিভিন্ন দাবি দাওয়া পূরণেরও আশ্বাস দেওয়া হয়। নির্বাচন যায় নির্বাচন আসে। প্রার্থীরা বিজয়ী হন। দিন যায় মাস আসে, বছর কেটে যায়। কিন্তু সেই আগের মতই অবহেলিত রয়ে যায় কুমার পাড়া। ছত্তরুয়া মৃৎ শিল্পি সমিতির সভাপতি মৃদুল চন্দ্র পাল বলেন, এর আগে একাধিকবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি আবার করেছি। সরকারি বেসরকারি অবহেলার কারণে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না ওই পেশায় জড়িতরা। ফলে অচিরেই বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেবল পূর্বপুরুষের পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই তারা এখনো শত প্রতিকূলতা মাড়িয়ে এ পেশায় জড়িয়ে আছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, কুমারপাড়ার বাসিন্দাদের সংকটের কথা আমি জানি না। ওনারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে মাটির সংকট নিরসনে চেষ্টা করা হবে।