যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল জ্বালানি কিনবে ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কিনবে ভারত। বাণিজ্যঘাটতি কমাতে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও তেল ও গ্যাস আমদানি করবে ভারত। খবর বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ভারত) আমাদের কাছ থেকে অনেক তেল ও গ্যাস কিনতে যাচ্ছে। তাদের এসব জ্বালানি দরকার। আর আমাদের কাছে তা আছে।’ মোদি বলেন, ‘ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা তেল ও গ্যাস বাণিজ্যের ওপর গুরুত্ব দেব।’ এছাড়াও পরমাণবিক জ্বালানিতে আরও আরও বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেন মোদি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটন সফরে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেন নরেন্দ্র মোদি। এরপর তিনি দেশটির নতুন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, মাস্কের সঙ্গে বৈঠকে মহাকাশ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। মোদি এমন সময় যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দেশের বাণিজ্যিক অংশীদারদের বিরুদ্ধে পারস্পরিক শুল্ক আরোপের আদেশ দিয়েছেন। বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে পুরোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানানোর সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের মধ্যে একটি চমৎকার সম্পর্ক বজায় আছে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ভারতের কাছে সামরিক হার্ডওয়্যার বিক্রি কয়েক মিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া নয়াদিল্লিকে এফ৩৫ যুদ্ধবিমানও দেবে ওয়াশিংটন। ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে এক ভারতীয় সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার অভিমত কী? কারণ, এটা স্পষ্ট যে বাইডেন প্রশাসনের আমলে মার্কিন ডিপ স্টেট (গোপন নেটওয়ার্ক) বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এমনকি মুহাম্মদ ইউনূসও জুনিয়র সরোসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘এতে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (মোদি) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। সত্যি বলতে শত শত বছর ধরে এ নিয়ে কাছ চলছে, এ নিয়ে পড়ছিলাম আমি। আমি বাংলাদেশ (এ বিষয়ে উত্তর দিতে) মোদির ওপর ছেড়ে দেব।’ তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো জবাব দেননি। তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। ওয়াশিংটনে মোদি-ট্রাম্প বৈঠকে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, কৌশলগত সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে উভয় নেতা একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি মোদির ১০ম সফর এবং ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন চতুর্থ সফর। ২০২৪ সালে সর্বশেষ বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্র যান মোদি। ২০১৪ সালে বারাক ওবামার শাসনামলে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন মোদি।