ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৯০

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ফেনীর দাগনভূঞায় পৌর শহরে ছাত্রদলের দুই পক্ষের মিছিলে বাঁধা প্রদান ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার ( ৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে দাগনভূঞা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। উভয় গ্রুফের সংঘর্ষে প্রায় ৯০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কয়দিন পরপর এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী ও সচেতনমহল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকালে গজারিয়া রাস্তার প্রবেশ মুখ থেকে ছাত্রদল একটি মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন জিরো পয়েন্ট থেকে একটি গ্রুপ লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে মিছিলের জন্য জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাজিব জানান, সারাদেশে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবীতে উপজেলা ছাত্রদলের আয়োজনে একটি বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করি। বিক্ষোভ মিছিলটি গজারিয়া রোড থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হচ্ছিল ওখানে ঠিক ওই মুহূর্তে ফটিকের নির্দেশনায় কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। অপরদিকে কলেজ রোড থেকে আমাদের উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক আশ্রাফুল ইসলাম জাবেদ ও কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক মাসুমের নেতৃত্বে একটি মিছিল গজারিয়া রোডের দিকে আসার পথে ফটিকের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তাদের উপরও হামলা চালায়৷ হামলায় আমি নিজে, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব তৌহিদুল ইসলাম মানিক, যুগ্ম আহ্বায়ক আশ্রাফুল ইসলাম জাবেদ, সারওয়ার পারভেজ ও মাসুমসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। রাজিব আরো বলেন, আমি বিগত আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে জেল, জুলুম ও হামলার শিকার হয়েছি। আজকে দুঃশাসন বিদায় নিলেও দাগনভূঞায় ফটিকের দুুঃশাসনের শিকার হচ্ছে এ দলের নেতাকর্মীরা। ফটিক যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আজকে আমাদের ছাত্রদলের মিছিলে যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে আমি জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের কাছে এর বিচার চাই। ফটিকের এই আগ্রাসন থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ চায়। আমি পশ্ন রাখতে চাই এই ফটিকের কাছে কি বিএনপি জিন্মি? আমরা ছাত্রদল বলতে চাই আমরা ফটিকের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম কখনো বরদাস্ত করবোনা। আমি প্রশাসনের কাছে বলতে চাই, এই ফটিকের কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। আপনারা ফটিকের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এ দাবী জানাচ্ছি। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ফেনী জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ফেনী জেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে দাগনভূঞায় কোন সভা, সমাবেশ বা মিছিল না করার। তারপরও বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ওই পক্ষ বারবার মিছিলের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। আর আজকে যে ঘটনা ঘটেছে তার শুরু থেকে আমি ছিলাম না, আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলার খবর পেয়ে আমি ছুটে আসি। তাদের হামলায় মিরাজ, সোহেল, সাদ্দাম, চৌধুরি হৃদয় ও জিতুসহ আমাদের প্রায় ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর। ফটিক আরো বলেন, দাগনভূঞায় যেকোন রাজনৈতিক প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে বলা হয় ফটিক গ্রুপ। তবে আপনাদের মাধ্যমে আমি জানাতে চাই যে, আমি বিএনপির রাজনীতি করি। আমার কোন গ্রুপ নেই। দীর্ঘ ১৭ বছর বহু মামলা, হামলা জর্জরিত হয়ে আজ যখন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করছেন এতে আকবর সাহেব তা পচন্দ করছেন না। কারন দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীদের তিনি মুল্যায়ন করেননি উল্টো পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ হতে যাচ্ছে যা মোটেই কাম্য নয়। সব ঘটনার জন্য বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন দায়ি। এদিকে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রি বাড়ীর নুরুল হুদা নামে এক ব্যক্তির ঘরে ঢুকে তাকে মারধরের অভিযোগ তুলেছে তার স্ত্রী ও কন্যা। নুরুল হুদার মেয়ে জানান, ফটিক গ্রুপের লোকজন আমাদের বাড়ীতে হামলা করে আমার বাবাকে মারধর করেছে এতে আমার বাবা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। ফেনী জেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক মোর্শেদ আলম জানান, দাগনভূঞাতে ছাত্রদল মিছিলের বিষয়ে কোন বিধিনিষেধ নেই। বিএনপির কমিটি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে তাই বিএনপির একটি সমাবেশ বন্ধ করেছে জেলা বিএনপি। তবে ছাত্রদলের মিছিল, সভা-সমাবেশ করতে পারবেনা এমন কোন নির্দেশনা আমরা জেলা ছাত্রদল দিইনি। আর আজকে ছাত্রদলের মিছিলে বাধার ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দাগনভূঞা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন লিটন জানান, বিএনপির মধ্যে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ব্যবসায়ীগন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে আজ সন্ধার পর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সহকারি পুলিশ সুপার (দাগনভূঞা-সোনাগাজী সার্কেল) তসলিম হোসাইন বলেন, সভা-সমাবেশ, মিছিল করা প্রত্যেক দলেরই সাংবিধানিক অধিকার। আমরা মনে করি রাজনৈতিক দলগুলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে এবং জনগনের ভোগান্তি না করে তারা শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কর্মসুচি করবে। তাদের দলীয় কোন কোন্দল থাকলে তা দলের জেলা বা কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সামাধান করবেন। কিন্তু তা না করে তারা বাজারে বা যে কোন স্থানে একপক্ষের মিছিলে অন্যপক্ষ হামলা করে আইনশৃংঙ্খলার অবনতি ঘটালে এবং জনগনের ভোগান্তি সৃষ্টি করলে আগামীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোরভাবে দমন করবে। উল্লেখ্য, ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সৃষ্ট কোন্দলে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীগন ও পৌরবাসী। এমন পরিস্থিতিতে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনায় দুপুরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।