রাশিয়ার বিদ্যুৎ সাম্রাজ্যে ফাটল
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/Russia-67a788945a05c-300x169.jpg)
রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাটোভুক্ত তিনটি দেশ- অ্যাস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া। শনিবার থেকেই রাশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এই তিন দেশ। রয়টার্স, সিএনএন। সিএনএন জানিয়েছে, বাল্টিক দেশগুলো ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করেছে। তারা নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অ্যাস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া প্রাথমিকভাবে নিজেদের উৎপাদিত বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করবে এবং পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। এস্তোনিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ভুটেলে পাই জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। লিথুয়ানিয়ার বিদ্যুৎ সঞ্চালন কর্তৃপক্ষ ‘লিটগ্রিড’ পুরোনো সোভিয়েত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করেছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য কিছু সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। লিটগ্রিডের প্রধান নির্বাহী রোকাস মাসিউলিস বলেছেন, রাশিয়ার গ্রিডে যুক্ত থাকার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। এই পদক্ষেপ রাশিয়ার জন্য একটি বড় কূটনৈতিক পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে। লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোভিলে শাকালিয়েনি বলেছেন, রাশিয়া শান্ত প্রতিক্রিয়া দেখালেও তাদের কথা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া এর প্রতিক্রিয়ায় সাইবার হামলা, গুজব ছড়ানো বা বিদ্যুৎ সংযোগে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন রাশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই রাশিয়া দেশটিতে হামলা চালায়। কালিনিনগ্রাদ নিয়ে একটি ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের মাঝে অবস্থিত রাশিয়ার এই ক্ষুদ্র্র ভূখণ্ড বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যায় পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞ সুজান নিসের মতে, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে কালিনিনগ্রাদে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটিয়ে বাল্টিক দেশগুলোকে দোষারোপ করতে পারে। বাল্টিক দেশগুলোর এই উদ্যোগের পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন রয়েছে। প্রকল্পটি ইউরোপের বিদ্যুৎ স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। ন্যাটো ইতোমধ্যে বাল্টিক সাগরের তলদেশে থাকা বৈদ্যুতিক তার ও অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নতুন মিশন শুরু করেছে। গত ক্রিসমাসের দিন ইস্টলিংক-২ তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যা এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফিনল্যান্ডের তদন্তে দেখা গেছে, একটি রুশ জাহাজের নোঙ্গর এই তারের ওপর পড়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নকরণ বাল্টিক দেশগুলোর জন্য শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং এক ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত বিজয়।