ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা নিয়ে নিজ দলেই বিভক্তি!
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/prothomalo-bangla_2025-02-03_s6h9fuay_Trump–trade-war-300x200.avif)
ফিলিস্তিনের গাজা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের বিতাড়ন এবং উপত্যকাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য ঘিরে নিজ দলেই বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্যে তাঁর কিছু রিপাবলিকান সহকর্মীর মধ্যে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে। অবশ্য অন্যরা তাঁর বক্তব্যকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ অভিহিত করে সমর্থন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ সময় গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় সমুদ্র উপকূলীয় অবকাশযাপন কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দেন তিনি। ট্রাম্পের এমন প্রস্তাবে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। তাঁর দলের মধ্যেও মতপার্থক্য দেখা দেয়। ভিন্নমত জানানো ব্যক্তিদের মধ্যে ট্রাম্পের এমন সহকর্মীও রয়েছেন, যাঁরা তাঁর বিদেশি সহায়তা বন্ধ ও কেন্দ্রীয় সরকারের হাজারো কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা আইনপ্রণেতারা বলছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য তাঁরা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সমর্থন করেন। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের কূটনীতির ভিত্তি। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের করের অর্থ কিংবা সেনা পাঠানোর বিরুদ্ধে তাঁদের কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল বলেন, ‘আমার তো মনে হয় আমরা আমেরিকা ফার্স্টের জন্য ভোট দিয়েছি। আমাদের সম্পদ খরচ করে এবং আমাদের সেনাদের রক্ত ঝরিয়ে আরেকটি দখলদারত্বের কথা চিন্তা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।’ কংগ্রেসে সামান্য ব্যবধানে ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। সিনেটর ক্রিস ভন হোলেন বলেন, এটি হলো অন্য নামে জাতিগত নিধন। রিপাবলিকান সিনেটর জেরি মোরান বলেন, চাইলেই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ধারণা ছুড়ে ফেলে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এটি এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। অবশ্য ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রস্তাবের প্রশংসা করেছেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিতের চেষ্টায় এটি সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ। এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দার মুখে সুর কিছুটা নরম করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, পুনর্গঠন ও ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে ‘সাময়িক সময়ের’ জন্য গাজার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। গুয়াতেমালা সফররত রুবিও দেশটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তিনি (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) অত্যন্ত উদারভাবে যে প্রস্তাব করেছেন, সেটি হলো সেখানে (গাজায়) যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়ার সামর্থ্য; ধ্বংসস্তূপ, অবিস্ফোরিত বোমা সরানোর কাজে সাহায্য করা; পুনর্গঠনে সাহায্য করা, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় নির্মাণে সহায়তা এবং এ ধরনের অন্যান্য কাজের প্রস্তাব করেছেন, যাতে তখন লোকজন ফিরতে পারেন।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে গাজায় জাতিগত নিধন এড়িয়ে যেতে বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত বুধবার জাতিসংঘের একটি বৈঠকে গুতেরেস বলেন, ‘সমাধান খুঁজতে গিয়ে আমাদের সমস্যা আরও খারাপ করে ফেলা যাবে না। আমাদের অবশ্যই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নীতি (ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে) সুনিশ্চিত করতে হবে।’ এদিকে বিশ্বজুড়ে নিন্দা সত্ত্বেও গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া নিয়ে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে।’ সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা পাঠানোর প্রয়োজন হবে না। এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। অন্যদিকে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর গাজা থেকে বাসিন্দাদের ‘স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রস্তুতি নিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এ নির্দেশ দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে কাৎজ বলেন, ‘প্রেসিডেন্টে ট্রাম্পের সাহসী পরিকল্পনাকে আমি স্বাগত জানাই। গাজার বাসিন্দাদের এলাকাটি ত্যাগ করা ও অভিবাসী হওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। সারা বিশ্বে এ ধরনের চর্চা আছে।’