সাজা কম হওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে: আদালত

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৫:০১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দুর্নীতির মামলায় সাজা কম হওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক দুই মামলায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম ও ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের রিমান্ড শুনানিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাজার পরিমাণ বাড়ানো দরকার। সাজা কম হওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে। জামানত ছাড়া এক ব্যক্তিকে ৫৮ হাজার কোটি ঋণ দিলে দুর্নীতি তো হবেই। আইন সংশোধন করা দরকার এবং সাজার পরিমাণ বাড়ানো দরকার। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আমরাও দুর্নীতির সাজা চাই৷ যারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের সাজা হোক। তবে আলমগীর কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। এদিন তাদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে দুদক। তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। পরে আদালত রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ১ লাখ ৯২ লাখ টাকা তার অ্যাকাউন্টে আসে। যার উপযুক্ত নথিপত্র দেখাতে পারেনি। আমরা মনে করছি উনি আরও লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। তাই তার ১০ দিনের রিমান্ড চাচ্ছি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি শুনানিতে বলেন, তিনি মানি লন্ডারিংয়ের মাস্টারমাইন্ড। শেয়ার কেলেঙ্ককারির হোতা। এসবে তাকে সহযোগিতা করেছে সালমান এফ রহমান। তিনিসহ একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করেছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য বের হবে তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। আসামিপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন বলেন, এই টাকা নিয়ে একটা মামলা চলমান। এটা মানিলন্ডারিং না। এই অভিযোগের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন জানাচ্ছি। ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আলমগীরের শুনানিতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, তাকে সম্পদ বিবরণ দাখিল করতে বলা হয়েছিল। তিনি যে বিবরণ দাখিল করেছেন বা আয়ের কথা বিবরণীতে বলেছেন, তার সঙ্গে অমিল পাওয়া যায় এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আসামির কাছে দুইটা পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। একটা বাংলাদেশের ও আরেকটা বারমুডার। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান, খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, উনি একজন ব্যাবসায়ী উনাকে হয়রানি করা হলে অর্থনীতি ধসে পড়বে। মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে উনার কোনো সম্পর্ক নাই। সম্পদের সব হিসাব দিয়েছে। অবৈধভাবে কোনো সম্পদ অর্জন করে নাই। মানি লন্ডারিংয়ের এসব অভিযোগ সব মিথ্যা। দুদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর শুনানি শেষে আসামি শিবলী রুবাইয়াত ও আলমগীরের উদ্দেশ্যে বিচারক বলেন, আপনারা কিছু বলতে চান? এরপর ম্যাক্সগ্রুপের গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমি একজন সিআইপি, আমার প্রতিষ্ঠান আছে দেশে। আমি এই কিছু টাকা মানি লন্ডারিং কেন করবো। প্রতিমাসে আমি ১০ হাজার লোকের ১৩ হাজার কোটি টাকা বেতন দেই। বছরে ৩০০ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে ট্যাক্স দেই। আমি ইঞ্জিনিয়ারদের গৌরব। আমার মতো লোককে যদি হেনস্থা করা হয় তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতি। শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, আমি দুদকে চার মাস দৌড়াদৌড়ি করেছি৷ দুদক যেসব তথ্য চেয়েছে আমি সব দিয়েছি। আমার ও পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার সবকিছু অনুসন্ধান করা হয়েছে৷ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ ছাড়া আমার কোনো সম্পদ নেই। আমার পরিবারের নামে কোনো শেয়ার নেই। রেমিট্যান্স আসছে, সেটা নিয়ে দুদক বলছে মানিলন্ডারিং করেছি। পরে আদালত তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেওয়ার পর শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম কাঁদতে শুরু করেন। এর আগে বুধবার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে তোলা হয় তাদের। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে রিমান্ড বাতিল আবেদন ও জামিন আবেদনের যথাযথ নথি না থাকায় বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ঠিক করেন আদালত এবং দুজনকেই কারাগারে পাঠানো হয়।