দুপুরে ছাত্রদল নেতা কর্তৃক হেনস্তা, রাতে কলেজছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:০১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

পটুয়াখালীর বাউফলে বন্ধুর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গিয়ে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে কয়েকজন তরুণের হাতে হেনস্তার শিকার হন এক কলেজ ছাত্রী। এ ঘটনার পর ওই ছাত্রী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ছাত্রীর নাম সম্পা ওরফে ইতি দাস (১৯)। তিনি দাসপাড়া গ্রামের সমীর দাসের মেয়ে এবং বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে সোমবার দুপুরে উপজেলা সদরের পাবলিক মাঠ সংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁয় ইতি দাস ও তার বন্ধুকে হেনস্তা করেন ছাত্রদল নেতা হৃদয় রায়হান ও তার সহযোগীরা। স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্তরা ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এই বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব জাকারিয়া আহমেদ জানান, অভিযুক্ত হৃদয় রায়হান বাউফল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। ইতোমধ্যে তাকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। জানা যায়, সোমবার সকালে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঘুরতে বের হন ইতি দাস। দুপুর ১২টার দিকে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে যান। তখন হৃদয় রায়হান ও তার সঙ্গীরা তাদের উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে হৃদয় ইতির বন্ধুকে টেনে রেস্তোরাঁর বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং মারধর করেন। ইতি বাধা দিলে তাকেও হেনস্তা করা হয়। পরে হৃদয় ইতির বাবা-মাকে ফোন করে ডেকে পাঠান। ঘটনার পর এক পর্যায়ে ইতির বন্ধু ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহিন তাদের থানায় নিয়ে আসেন। বিকাল ৪টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ইতি দাসের স্বজনরা জানিয়েছেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ি ফিরে ইতি বাসার দোতলায় ওঠেন। এরপর আর নিচে নামেননি। পরিবারের কাউকে কিছু বলেননি। রাত ৯টার দিকে খাবার খেতে ইতিকে তার মা ডাকতে গিয়ে দেখেন ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করেন মা। তখন প্রতিবেশী লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ইতি দাসের চাচাতো ভাই বলেছেন, ‘নিজের সামনে বন্ধু ও তাকে হেনস্তা এবং পরিবারকে অপদস্থ হতে দেখে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ইতি। ঘটনায় জড়িতরা ছাত্রদল নেতা সাকিবুজ্জামান রাকিবের ঘনিষ্ঠজন এবং দলের নেতাকর্মী। আমরা কার কাছে বিচার চাইবো। উল্টো ওই ঘটনার পর থেকে ইতির পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে আছেন। ফলে থানায় মামলা পর্যন্ত করেননি।’ অভিযুক্ত হৃদয় রায়হান দাবি করেছেন, ‘ওই তরুণী ও তার বন্ধুকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়েছি আমরা। পরে তাদের পরিবারকে খবর দিয়ে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা না এসে উল্টো পুলিশকে পাঠিয়েছিল। এতে বিষয়টি জানাজানি হয়। একপর্যায়ে মেয়েটা কান্না করতে করতে থানা থেকে বাসায় চলে যায়।’ তবে রেস্তোরাঁর কর্মচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, তরুণী ও তার বন্ধু স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন। কোনো আপত্তিকর অবস্থার প্রশ্নই আসে না। হৃদয় ও তার সহযোগীরা তাদের উত্ত্যক্ত করেন। প্রতিবাদ করায় তারা হেনস্তার শিকার হন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক মো. শাহিন বলেন, ‘এ ঘটনার মূলহোতা হৃদয় রায়হান। সোমবার দুপুরের দিকে এক তরুণ থানায় এসে জানায় তার মোটরসাইকেল আটকে রেখেছে হৃদয় ও তার সহযোগীরা। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর হৃদয় আমাকে বলে এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু ঘটনাটি যে নারী সংক্রান্ত বিষয়, তা আমাকে কেউ জানায়নি। পরে ওই তরুণকে উদ্ধার করে থানায় আনার পর জানলাম ঘটনাটি নারী সংক্রান্ত। বিকালে তাদের ছেড়ে দেওয়ার পর এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। কিন্তু অভিযোগ দিতে রাজি হননি তারা।’ বাউফল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, ইতির মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।