অপরাধ জগতে মেরূকরণ, হত্যা হামলা বেড়েছে খুলনায়

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

খুলনায় সন্ত্রাসীদের মেরূকরণ হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে নতুন করে সংগঠিত হয়েছে সন্ত্রাসী পলাশ গ্রুপের সদস্যরা। পুরোনো সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু, আশিক বাহিনীর অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই তাদের সংঘাত হচ্ছে। নগরীতে সশস্ত্র মহড়া, প্রকাশ্যে খুনের ঘটনাও বাড়ছে। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বিগত দিনে হামলা ও হত্যার প্রতিশোধ, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুন-সংঘাত বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা সন্ত্রাসীদের অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তথ্য বলছে, গেল নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে খুলনা মহানগরীতে ১০টি খুনের মামলা হয়েছে। বছরের শেষ ৬ মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২৩টি। অন্যদিকে ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খুন হয়েছিল মাত্র একটি। শেষ ৬ মাসে হত্যা মামলা ছিল ১১টি। গত জানুয়ারি মাসেই দুটি হত্যা এবং ৬ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে জখম করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুলনায়ও পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। এই সুযোগে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতারা এলাকায় ফিরে আসে। অনেকে জেল থেকে ফিরে আগের তৎপরতায় জড়িয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্টের আগে খুলনায় গ্রেনেড বাবু, আশিক ও নূর আজিম গ্রুপের তৎপরতা ছিল বেশি। এর মধ্যে আশিক ও নূর আজিম নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তৎপরতা চালাত। কিন্তু নগরজুড়ে আধিপত্য ছিল গ্রেনেড বাবুর তৈরি ‘বি কোম্পানির’। নগরীর মাদক সিন্ডিকেটের বড় অংশ ছিল তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। গত ১ জানুয়ারি নূর আজিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আশিকের ভাই সজীবসহ পরিবারের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তালিকায় নাম থাকায় দেশে ফেরেনি শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু। শক্তি প্রদর্শন করতে তৎপর হয়ে ওঠে পলাশ গ্রুপ। গত দুই মাসে ৯ জনকে কোপানাে ও ৩ খুনে গ্রুপটির নাম এসেছে। সন্ত্রাসীদের তৎপরতার বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন দুই ব্যক্তি জানান, মাত্র দুই মাসের মধ্যে বাহিনী তৈরি করে বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে পলাশ গ্রুপ। দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, লোকবল তৈরি করে তার উত্থান অবিশ্বাস্য রকম দ্রুততার সঙ্গে ঘটেছে। গ্রেনেড বাবুর সঙ্গে বিরোধ ছিল এমন সন্ত্রাসী ট্যাঙ্কি শাওন, কালা লাভলু এবং দেলোও পলাশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এছাড়া পুরোনো সন্ত্রাসী সুমন শেখ ওরফে বোমা সুমন, কালা রনি, দাদো মিজান সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ১২ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আরও অভিযান চলছে। আলোচিত ৫ খুন, মামলা গতিহীন গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের ১০টি খুনের মধ্যে রিকশাচালক তাসিনুরকে হত্যা করে রিকশা ছিনতাই, হরিণটানার কৃষ্ণপদ হত্যা, অজ্ঞাত দুটি লাশ উদ্ধার এবং সাবেক এমপি মন্নুজান সুফিয়ানের ভাগনে রূপম হত্যা মামলার সুরাহা হয়েছে। অন্য ৫টি মামলা নিয়ে আলোচনা চলছে নগরজুড়ে। এসব মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২ নভেম্বর রাতে নগরীর আলকাতরা মিল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে আশিকুর রহমান ওরফে পঙ্গু রাসেলকে হত্যা করে। গত ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর টুটপাড়া এলাকায় গুলি ছুড়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন মোল্লা বোয়িংকে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, আশিকের ভাই সজীবসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ১৮ ডিসেম্বর হাজী মুহসীন রোডে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে রংমিস্ত্রি মো. সোহেলকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তৈমুর ইসলাম বলেন, ফাকাব্বির পলাশ গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। অন্যরাও একই গ্রুপের। গত ২০ জানুয়ারি পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মানিক হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মেহেদী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি রাতে নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারকে হত্যা করে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও পলাশ গ্রুপ জড়িত। কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের টহল, চেকপোস্ট, গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। খুব শিগগির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।