ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে জুলাইয়ের আহতদের অবস্থান

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা।রোববার রাত ১২টার দিকে তারা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে চলে যান। যমুনার সামনে পৌঁছালে দায়িত্বরত সেনাসদস্যরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনিও আন্দোলনরতদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে গত শনিবার আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে আন্দোলনে নামেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। রোববার তারা দিনভর রাজধানীর শিশুমেলা মোড়ে মিরপুর সড়ক অবরোধ করেন। সন্ধ্যায় সেখান থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রা করেন আহত ব্যক্তিরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহবাগ এলাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পৌঁছান। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকা পড়েন। তখন ওই জায়গায় বসে বিক্ষোভ শুরু করেন আহতরা। রাত পৌনে ১২টার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে তারা যমুনার দিকে এগিয়ে যান। আন্দোলনকারীরা যমুনার সামনে পৌঁছালে সেখানে যান হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যরা আন্দোলনকারীদের সামনে অবস্থান নেন। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আহতদের সুচিকিৎসা দিতে পারে নাই, এটা সরকারের ব্যর্থতা। এ জন্য সরকারের আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি দায়ী, সচিবরা দায়ী, আমলারা দায়ী। যারা আহত হয়েছেন, তাদের আমরা সুচিকিৎসা দিতে পারি নাই, এ জন্য আমি নিজে ব্যথিত।’ আহতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনাদের স্বীকৃতি এবং দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য আমরাও সরকারের সঙ্গে চেষ্টা করছি। আপনারা শান্ত থাকুন, আপনাদের বিষয়গুলো নিয়ে আমরাও কাজ করছি। সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনাদের দাবি পূরণ করবে। আপনাদের তালিকা করা হয়েছে।’ এ সময় হাসনাতকে উদ্দেশ করে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমাদের আরও গুলি করুন, আমরা মরতে চাই। এই পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে আমরা বাঁচতে চাই না। হয় স্বীকৃতি দিন, না হয় আমাদের গুলি করে মেরে ফেলুন। স্বীকৃতি না দিলে আমরা আত্মহত্যা করব।’ হাসনাত আবদুল্লাহ কথা বলার সময় আহতরা ‘বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘রক্ত দিয়েছি আরও রক্ত দেব’, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়া আগ পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ব না’, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিন, না হয় আমরা আত্মহত্যা করব’, ‘হয় আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিন, না হয় গুলি করে মেরে ফেলুন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনকারীদের একজন আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’ এর আগে তিনি বলেছিলেন, শনিবার রাত থেকে তারা সড়কে অবস্থান করলেও সরকারের দায়িত্বশীল কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা, ন্যূনতম সহানুভূতিও দেখাননি। অথচ জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত মানুষদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। রাত দেড়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যমুনার সামনে অবস্থান করছিলেন আহতরা। হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আরও কয়েক সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তারাও আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে থামানোর চেষ্টা করেন। আহত ব্যক্তিরা বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আমরা সড়ক ছাড়ব না। আমরা বারবার সড়কে নামতে চাই না। এবার যেহেতু সড়কে নেমেছি, আমাদের দাবি আদায় করেই ছাড়ব।’ আজীবন চিকিৎসাসহ ভাতা পাবেন আহতরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড পাঠানো হয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় বিদেশি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞও দেশে আনা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। আরও লাগবে। মুসা নামে আহত একজনের চিকিৎসায় ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের আজীবন চিকিৎসাসহ অন্যান্য ভাতা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের কোনোভাবেই সরকার অবহেলা করছে না। নতুন করে তাদের তালিকা তৈরি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছবিসহ আহতদের নামের তালিকা পাঠানোর জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। ফারুক-ই-আজম বলেন, আহতদের ব্যাপারে ক্যাটেগরি অনুযায়ী তালিকা হচ্ছে। অধিদপ্তরের নীতিমালার অধীনে পুনর্বাসন, ভাতা ও এককালীন সঞ্চয়পত্র দেওয়া হবে। এ জন্য এই বছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ২৩২ কোটি টাকা পেয়েছি। এ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র শহীদদের পরিবারকে দেওয়া হবে। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের অবশিষ্ট ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আহতদের ক্যাটেগরি অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।