দলগুলোকে এক থাকার আহ্বান আলী রীয়াজের

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণের পথ তৈরি করা হয়— এমন মন্তব্য করেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ থেকে উত্তরণে শুধু ব্যক্তির অপসারণ নয়, কাঠামোগতভাবে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও গণতন্ত্রায়ণের যে সুযোগ রক্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে, সেই জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোকে এক থাকতে হবে। শনিবার ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ : সুশাসন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক সেমিনারে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই আহ্বান জানান। সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড গুড গভর্ন্যান্স রাজধানীর ইস্কাটনে আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এই কাঠামোগত পরিবর্তন অকস্মাৎ হবে না। সবার অংশীদারত্বের মধ্য দিয়ে সেটা সম্ভব। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সেটাই একমাত্র পথ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমান, সিডিজিজির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবু মুহাম্মদ নিপার, অধ্যাপক মো. হাছান উদ্দীন, গবেষক মো. রফিকুল ইসলাম, সিডিজিজির পরিচালক সোয়ালেহীন করিম চৌধুরী, সাংবাদিক জিমি আমির প্রমুখ বক্তব্য দেন। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যে কোনো দেশে সাধারণত তিনভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় সেনা শাসনের মাধ্যমে, এক দলীয় ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা। দুটি দুর্বলতার কারণে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরশাসন তৈরি হয়। একটি হলো প্রাতিষ্ঠানিক আরেকটি হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মূল জায়গায় আছে সংবিধান। ১৯৭২ সালে যেদিন সংবিধান গৃহীত হয়েছে সেদিন থেকেই দেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে- এমন মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের ব্যবস্থা ছিল না কেন? এখনো সে ব্যবস্থা নেই। সংবিধানে ১৭ বার সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু এক জায়গায় স্থির। এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা। ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা নেওয়া এবং ৯০-এর অভ্যুত্থানের পর আবার প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা নেওয়ার কথা উল্লে­খ করে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী দুটো প্রধান রাজনৈতিক দল একমত হয়ে পাশ করেছিল। রাষ্ট্রপতির হাতের সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাও পেলেন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাও পেলেন। প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করা যাবে না। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সংসদ-সদস্য পদ চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রীকে অভাবনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাকে অপসারণের পথ রাখা হয়নি এবং সংসদ-সদস্যদের তার অধীন করে রাখা হয়েছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন তরুণরা, ছাত্ররা। তার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন রকম শক্তি জড়িত হয়েছিল। তাই আকাক্সক্ষার ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। সাধারণভাবে শুধু ফ্যাসিবাদী শাসন বা একজন ফ্যাসিবাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য এই আন্দোলন হয়নি। তবে এটাও সত্য, এই আন্দোলনে যুক্তদের কারও কারও আকাক্সক্ষা ওইটুকুই ছিল বা এখনো আছে। তবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন দুটি বিষয় স্পষ্ট, যেখানে ঐকমত্য আছে। সেগুলো হলো- স্বৈরতন্ত্র যাতে আর ফেরত না আসে এবং একটি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, শুধু কথায় পরিবর্তন হবে না। অনেক বিষয়ে ভিন্নমত থাকবে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। যে জায়গায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, শুধু ব্যক্তির অপসারণ নয়, কাঠামোগতভাবে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন ও গণতন্ত্রায়ণের যে সুযোগ রক্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে সে জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোকে এক থাকার আহ্বান জানান তিনি।