আ.লীগ নেতা হত্যায় একই দলের নেতারা জড়িত!

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:১৭ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলবাসী রোববারের (২ ফেব্রুয়ারি) রায়ের অপেক্ষায়। আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার রায় হবে এদিন। তাই অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন জেলাবাসী। আসামিদের বিরুদ্ধে কী রায় দেবেন বিচারক। আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মেয়র, সাবেক ব্যবসায়ী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাই জড়িত। হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছে টাঙ্গাইলের বহুল আলোচিত ‘খান পরিবারের’ সন্তানরা। এজন্য বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; কিন্তু তাদের কখনো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় এই খান পরিবারের চার সন্তান আসামি হয়েছেন। তবে এই প্রথম তাদের বিরুদ্ধে মামলার রায় হতে পারে। গত ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার বাদী ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শেষ হয়েছে। বিচারক মো. মাহমুদুল হাসান আগামী রোববার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ দিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে এ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামক দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে আওয়ামী দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নাম বের হয়ে আসে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আবদুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতেও হত্যার বর্ণনা উঠে আসে। এরপর চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান। আমানুর রাহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছর হাজতে থাকার পর জামিন লাভ করেন। গত ৫ আগস্টের পর তিনি আবার আত্মগোপনে চলে যান। অপর দুই ভাই ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফিজুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। বিচার চলাকালে দুই আসামি আনিছুর রহমান ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়। মামলা হলেও বিচার হয়নি এই চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন সময় মামলা হয়েছে। রানার বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচটি হত্যা মামলাসহ অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। সহিদুর রহমান খান মুক্তির বিরুদ্ধেও পাঁচটি হত্যাসহ মামলা হয়েছে প্রায় ৪০টি। জাহিদুর রহমান খান কাকনের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ এবং সানিয়াত খান বাপ্পার বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ ডজনখানেক মামলা হয়েছে। এত মামলা হলেও তাদের কখনো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। কখনো তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার হয়েছে। কখনো বাদীপক্ষকে চাপ দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেছেন। আবার কখনো ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতে যাননি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো মামলার বিচার হয়নি এর আগে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে ২৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, জেরা, কয়েকজন আসাসি ও সাক্ষীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আদালতকে শোনানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণে সক্ষম হয়েছি যে, আসামিরা দোষী। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করি। নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন বলেন, মামলা দায়ের থেকে তদন্ত, আদালতে অভিযোগ গঠন, সাক্ষী গ্রহণ বিভিন্ন পর্যায়ে আসামিরা বিচার প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেছে। আইন সঠিক পথে চললে আসামিদের শাস্তি হবে বলে আশা করছি।