গ্রামের বাজারে ডিম বিক্রি করছেন চবি ছাত্রী
পড়াশোনা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার খরচ মেটাতে ছুটিতে বাড়িতে এসে গ্রামের বাজারে ডিম বিক্রি করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা (২১)। মাত্র ১৫ দিনের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন তিনি। এ সময় তার মা-বাবা ও ছোট বোনের সঙ্গে সময় কাটানোসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়ানোর কথা; কিন্তু তার ভ্যানচালক বাবা ও পরিবারের আর্থিক অনটনের কথা চিন্তা করে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মেরিগাছা বাজারে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা ৭-৮টা পর্যন্ত সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন। টুম্পার এ ডিম বিক্রির ঘটনা এলাকায় সাড়া ফেলেছে। ফেসবুকে এই ভিডিও এখন ভাইরাল। টুম্পা নগর ইউনিয়নের দোগাছী গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রহিমের মেয়ে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির খরচ জোগাতে টুম্পা একটি রেস্টুরেন্টে কর্মচারীর কাজ করতেন। সেই সময় তার রেস্টুরেন্টে কাজ করার ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ হলে অনেকেই তার পড়াশোনার খরচ জোগাতে এগিয়ে আসেন। বুধবার বিকালে মেরিগাছা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খোলা আকাশের নিচে খড়ির চুলা জ্বলছে এবং সেখানে বড় কড়াইয়ে শতাধিক ডিম সিদ্ধ হচ্ছে। পাশে বসে টুম্পা ডিমের খোসা ছাড়াচ্ছেন। খোসা ছাড়ানোর পর ডিমের ওপর লবণ-ঝাল ছিটিয়ে তা ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন তিনি। একটি সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন ১৫ টাকা এবং দুটি নিলে ২৫ টাকা। একই সঙ্গে প্রতি হালি ৪২ টাকা দরে কাঁচা ডিম বিক্রি করছেন তিনি। টুম্পা জানান, খুবই কম লাভে আমি ডিম বিক্রি করছি। প্রতি হালি কাঁচা ডিমে লাভ হচ্ছে মাত্র তিন টাকা এবং সিদ্ধ ডিমে লাভ হচ্ছে গড়ে হালিপ্রতি ৪-৬ টাকা। সিদ্ধ ডিমের ক্ষেত্রে খড়ি, নষ্ট ডিম বা খোসা ছাড়াতে গিয়ে নষ্ট হয়। যার ফলে এর লাভ মাঝেমধ্যে সামান্য ওঠানামা করে। প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৭০০ ডিম বিক্রি হয়। গত দুই দিনে প্রায় দেড় হাজার টাকা লাভ হয়েছে। টুম্পা আরও বলেন, এলাকার খলিসাডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। বাবা ভ্যান চালিয়ে আমাদের দুই বোনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। অনেকে সহযোগিতাও করেছেন। আমি নিজেও বড় হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে আমি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত সপ্তাহে বাড়িতে এসেছি এবং ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরব। গ্রামের বাজারে ডিম বিক্রির বিষয়ে টুম্পা বলেন, বিষয়টি কে কিভাবে নেবে সেটা জানি না, আর সেদিকে তাকিয়ে থাকলেও আমার চলবে না। কারণ কোনো কাজই ছোট নয়। আমি সৎভাবে আয় করছি। উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাশ নেওয়ার পর বাড়তি আয়ের জন্য অনেক কাজ করেন। সেটাকে কেউ ছোট করে দেখে না। টুম্পার বাবা ভ্যানচালক আব্দুর রহিম বলেন, আমি নিজেই প্রতিদিন ভ্যানে করে মেয়েকে বাজারে আনা-নেওয়া করি। টুম্পা অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ছুটিতে এসে খরচ জোগাতে সে ডিম বিক্রি করছে। যাওয়া আসার সময় অনেক টাকা ভাড়া লাগে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক খরচ হয়। বাবা হিসেবে সব খরচ দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমার। তাই সে নিজেই উপার্জন করে টাকা জোগানোর চেষ্টা করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী হয়েও বাজারে এভাবে ডিম বিক্রির ঘটনাটি নিঃসন্দেহে সাহসী পদক্ষেপ। ইতোপূর্বেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এবার তার বাবাকে স্বাবলম্বী করাসহ তাকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেই বিষয়টা দেখা হচ্ছে।