মনোনয়ন লড়াইয়ে বিএনপির হাফ ডজন প্রার্থী
পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৫ আসন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপির হাফ ডজন প্রার্থী। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। মাঠে তৎপর জামায়াতের নেতাকর্মী-সমর্থকরাও। যদিও এখনো দলটি তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। রাজশাহী-৫ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক বিশেষ সম্পাদক ও জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা দলীয় মনোনয়নে বিজয়ী হন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তন করে ডা. মনসুর রহমানকে মনোনয়ন দেয়। তিনি বিজয়ী হন। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দারাকে মনোনয়ন দেয়। জয় পেলে সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রতাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলার আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রুকুনুজ্জামান আলম, জিয়া পরিষদের কেন্দ্রের সহকারী মহাসচিব সিরাজুল করিম সনু, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল এবং এ আসনের প্রয়াত সংসদ-সদস্য নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলকার নাঈম মোস্তফা। নেতাকর্মীরা জানান, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয়তা বাড়িয়েছেন। এতে পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে নির্বাচনি আবহ তৈরি হয়েছে। রাজশাহী কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে অধ্যয়নকালে ১৯৮৯ সালে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন আবু বক্কর সিদ্দিক। ১৯৯১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ছাত্রদলের হল রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ মুজিব হলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সিদ্দিক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরে সহসভাপতি হন। বর্তমানে তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, দীর্ঘ তিন যুগ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থেকেছি। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের দুঃশাসনকালে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। চারবার গ্রেফতার হয়েছি। জেল খেটেছি। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাঠে থেকে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছি। বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেছি। নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মসূচিতে চাঙা রাখতে নিরলসভাবে কাজ করছি। আশা করছি, এসব বিষয় মূল্যায়ন করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান মাহমুদা হাবিবা ২০০৫ সালে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৯ সালে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তিনি জি নাইনের (বিএনপির থিংকট্যাংক) ফাউন্ডার মেম্বার। এছাড়া বিএনপির কয়েকটি রিসার্চ টিমের সদস্য। বর্তমানে তিনি বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য। টকশো ব্যক্তিত্ব হিসাবে হাবিবা দেশব্যাপী পরিচিত। মাহমুদা হাবিবা বলেন, আগামীর বাংলাদেশ নতুনভাবে তৈরির জন্য নতুন নেতৃত্বকে সামনে আনার কোনো বিকল্প নেই। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে মানুষের রাজনৈতিক চিন্তাধারায়। বিএনপি আগামী নির্বাচনে যে নেতাদের মনোনীত করবে, তাদের অবশ্যই এই পরিবর্তিত সময় ও ভাবনাকে ধারণ করার সক্ষমতা থাকতে হবে। যোগ্যতা থাকতে হবে বিএনপির নীতি ও আদর্শকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার। তিনি বলেন, নতুন সময়ের প্রত্যাশা পূরণে রাজশাহী-৫ আসনে আমি নিঃসন্দেহে আমার দলের জন্য সেরা পছন্দ হব বলে আস্থা রাখি। আমি বিশ্বাস করি, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দলের জন্য আমার সুদীর্ঘ নিরলস পরিশ্রমের মূল্যায়ন করবে। রুকুনুজ্জামান আলম ১৯৮৩ সালে পুঠিয়ার বানেশ্বর কলেজে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি জেলা ছাত্রদলের যুগ্মসম্পাদকের দায়িত্ব পান। ৯০-এর আন্দোলনে আলমের সাহসী ভূমিকা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। ১৯৯১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। আলম ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা বিএনপির সহসভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি। রুকুনুজ্জামান আলম বলেন, পুঠিয়া-দুর্গাপুরের রাজনীতিতে একসময় সংসদ-সদস্য নাদিম মোস্তফা ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। গত বছর তিনি মারা যান। আমি নাদিম মোস্তফার সঙ্গেই ছাত্রদল এবং বিএনপির রাজনীতি করেছি। ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলাম। আমার ঘনিষ্ঠরা এখন বিএনপির নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। অনেকেই মন্ত্রী এবং সংসদ-সদস্য হয়েছেন। ছাত্রদল করার সময় আমার নামে ৩৩টি মামলা হয়েছে। সেসময় তিনবার জেলে ছিলাম। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময়ও ১৩টি মামলা হয়েছে। সাতবার কারাবন্দি ছিলাম। শত নির্যাতনের মাঝেও কর্মীদের বুকে আগলে রেখেছি। দলের প্রতি আনুগত্য, আত্মত্যাগ, নির্যাতন, মামলাসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নীতিনির্ধারণী মহল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী। সিরাজুল করিম সনু ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। সনু ১৯৯৯ সালে জিয়া পরিষদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ২০০৭ সালে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব। সনু বলেন, আমি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছি। এবারও চাইব। দলের প্রতি আমার ত্যাগ এবং অবদানের বিষয়টি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিবেচনায় নিয়ে আমাকে মূল্যায়ন করবে। এদিকে এ আসনে আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এবং জাতীয় পার্টির রাজশাহী জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল হোসেন। ১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসনে জাতীয় পার্টির টিকিটে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি। কখন নির্বাচন হবে কিংবা জাতীয় পার্টি নির্বাচনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে-সেটির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। নির্বাচনের সুযোগ থাকলে এবং দলের নেতাকর্মীরা চাইলে নির্বাচন করব। জামায়াতের রাজশাহী জেলা শাখার সাবেক নায়েবে আমির এবং পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ উল্লাহ বলেন, এ আসনে জামায়াতের নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশি। তৃণমূল পর্যায়ে আমরা শক্তি সঞ্চয় করছি। সাধারণ মানুষকে মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে। আর প্রার্থীর বিষয়ে জামায়াতের নীতনির্ধারণী মহল সিদ্ধান্ত দেবে।