আলো থেকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন বাংলাদেশ রুপা আসমা
নতুন বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ, মুক্ত বাংলাদেশ বলে বুলি আওড়ানো কথিত দেশপ্রেমিকদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কি হবে এখন এই টালমাটাল দেশটার? কে নেবে এই দায়িত্ব.. কেই বা সামলাবে এই সোনার বাংলাটাকে। কেমন সুন্দর শান্ত থেকে অশান্ত হয়ে গেলো আমাদের মাতৃভূমিটা.. এসব ভাবলে এখন বাঙালীদের বুক ফেটে কান্না আসে। কিন্তু মুখ ফুটে বলার স্বাধীনতা তাদের নাই। তিল তিল করে গড়া স্বপ্নের দেশটা এভাবেই কি শেষ হতে দিবো আমরা? আমার মনে হয় কোনো বাঙালী চাইনা এমন কোন কাজকে সাপোর্ট করতে যাতে বাংলাদেশের অস্ত্বিত্ব বিপন্ন হয়। দেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এক নির্দলীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক বললেন, জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, তার প্রতি সর্বস্তরের মানুষের বিপুল সমর্থন ছিল। কিন্তু মাত্র সাড়ে পাঁচ মাসে সেই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। তার প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণহীন, গন্তব্যহীন বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে তা মানুষের নৈতিকমুল্যবোধ এবং বর্তমানে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকেই আমরা অনুমান করতে পারি। দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে কিন্তু মানুষ বাড়েনি : বাংলাদেশের সর্বত্র এখন অত্যাচার, নির্যাতন, একজন আরেকজনে হত্যা পর্যন্ত করতে দ্বিধা করছে না এ থেকে বলা যায় দেশে জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি মানুষ, বেড়েছে মানুষরুপি মুখোশ। আর এই কথাটা চিরন্তন একটি সত্য কথা। আগের তুলনায় বর্তমানে আমাদের দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। অনেক অনেক মানুষ আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তারা কি আসলেই মানুষ তাদেরকে আসলে মানুষ বলা যায়। মানুষ নামে অনেক পশু আমাদের সমাজে রয়েছে। তারা মানুষ হিসেবে জন্মালেও তাদের কর্মকান্ড মানুষের আওতায় পড়ে না। অমানবিক আচরণ করে তারা মানুষই মানুষের সাথে। মানুষের সাথে অন্যায় অত্যাচার করে মানুষ হয়ে মানুষকে অনেক কষ্ট দেয়। অবশ্যই মানুষের উপর এত অন্যায় অত্যাচার করা কি স্বাভাবিক। তাদেরকে কি আসলেই মানুষ বলে। আসলে মানুষ বর্তমানে পশুর চেয়েও খারাপ হয়ে গিয়েছে মানুষরূপী মানুষগুলো। টাকা পয়সা গাড়ি-বাড়ি ক্ষমতার লোভ হিংসা সবকিছু মানুষকে তার মানবিকতা মনুষত্ব থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়েছে। যার কারনে মানুষ একজন আরেকজনকে পেছনে ফেলে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে সেটাই চিন্তা করছে। এগিয়ে যাবার পথে যদি বাধা সৃষ্টি হয় তাহলে মানুষ হয়ে আর একটা মানুষের প্রতি অন্যায় অত্যাচার করতে যে মানুষটার খুব ক্ষতি করতে দুবারো চিন্তা করে না। সে যে মানুষ হয়ে পশুর মতো আচরণ করছে সেটাও সে তখন বুঝতে পারে না। এরকম অনেকে মানুষ আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। একটা মানুষ তার নিজের কথা ভাবতে গিয়ে অন্য মানুষদের প্রতি কতটা নির্মম আচরণ করেছে। মানুষের কম বেশি এরকম খারাপ কাজের কথা আমরা সবাই জানি। আমাদের আশেপাশে প্রায় অনেক মানুষই এরকম খারাপ কাজ করে থাকে নিজেদের জন্য। নিজেকে ভালো থাকার জন্য এরকম দৃষ্টান্ত আমরা সবাই দেখতে পাই। কিন্তু মানুষের কাজ কি আসলেই এটা ছিল। মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে সবথেকে বেশি নিকৃষ্টতম কাজ মানুষেরা করে থাকে। প্রত্যেকটা মানুষই খুবই সুন্দরভাবে পৃথিবীর এই জীবনটা কাটিয়ে দিতে। পরিবার পরিজন নিয়ে সবকিছু নিয়ে তারা সুন্দরভাবে জীবনটা কাটাতে চায়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যে সুন্দরভাবে থাকার নেশা তাদেরকে এত বেশি আসক্ত করে ফেলেছে সেই স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে চলতে গিয়ে অন্য মানুষের স্বাধীনতায় এবং ভালো থাকে যে হস্তক্ষেপ করছে সেটা জেনেও সেরকমটাই করতে থাকে এবং অন্যায় করতে থাকা মানুষগুলো যদি সরল মনের হয় এবং দুর্বল হয়ে থাকে তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। খারাপ আচরণ করতে করতে একটা সময় পশুর রূপ ধারণ করে। দেশের বর্তমান চিত্র দেখলে মনে হয় জনসংখ্যা বেড়েছে কিন্তু মানুষ বাড়েনি। তবে সবার জানা উচিত প্রকৃতি কখনও কাওকে ক্ষমা করে না, ভবিষ্যতেও করবে না। ধর্মীয় অপসংস্কৃতি : কোরআন-সুন্নাহর সীমানা ও চিরায়ত রীতির পরিপন্থি যা কিছু হবে সবই মুসলমানদের জন্য অপসংস্কৃতি। মুসলিম উম্মতের অভ্যন্তরে বিজাতীয় যে কোনো জাতির আচার-আচরণ, পোশাক ইত্যাদিসহ সব ধরনের সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটা অপসংস্কৃতি। আর এসব অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে মুসলিম উম্মাহ আজ আক্রান্ত। ইসলামের সংস্কৃতি শুধু দীন বা ইবাদত, বিচ্ছিন্ন নয়। জীবন-বিচ্ছিন্ন সংস্কৃতির অনুষ্ঠান পালনের জন্য মুসলমানদের আলাদা আয়োজনের তেমন প্রয়োজন হয় না। এ জন্য মুসলমানের ইসলামী জিন্দেগি সবটাই সংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতি অনুষ্ঠাননির্ভার নয়। ইসলামী সংস্কৃতি আবার বিশেষ স্বকীয় অনুষ্ঠানকে অস্বীকারও করে না। ইসলামী সংস্কৃতির একটি মানদণ্ড আছে তা আল্লাহ প্রদত্ত। এই মানদণ্ড নির্ণয় করে সংস্কৃতি পালন করাই মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। কিন্তু সমাজে এমনও অনেক মুসলমান রয়েছেন যারা ইসলামী সংস্কৃতি আর অপসংস্কৃতির নির্ণয়ে অসচেতন। যার কারণে মুসলিম পরিবারেও প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে অপসংস্কৃতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ইসলামী সংস্কৃতি পরিহার করে সংস্কৃতির নামে চালানো হচ্ছে ভয়াবহ অপসংস্কৃতি। ইসলামের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশে। সেই টাকা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে বাংলাদেশের ধর্মীয় দলগুলো। সাধারন জনগনের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত এসব দল। ধর্মের আলোচনার নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তারা বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা করে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ায় যা আসলে ইসলামের পরিপন্থী। ধর্মের নামে রাজনীতি, অর্থ সংগ্রহ ও তা বিতর্কিত কাজে ব্যবহার ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। কিন্তু বাংলাদেশে এই অপসংস্কৃতি স্বাধীনতা বিরোধী একটি দল চালু রেখেছে। যা দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। এই ধর্মীয় অপসংস্কৃতি যদি বন্ধ করা না যায়, মৌলবাদ যদি মাথা চাড়া দেয় তবে বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত হতে সময় লাগবে না। এতে দেশে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, জঙ্গি হামলা, খাদ্য অভাব, নারী অধিকার খর্ব সহ বহুমুখী সমস্যায় পতিত হয়ে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সীমান্তে উত্তেজনা : শূন্যরেখার কাছাকাছি কাঁটাতারের বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের যেসব স্থানে উত্তেজনা দেখা গেছে তার অন্যতম চাপাইনবয়াবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুই দেশের কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি এবং মুখোমুখী অবস্থান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সীমান্ত উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সীমান্তে বিএসএফের বেড়া দেয়ার চেষ্টা করার দুই সপ্তাহের মধ্যে একই সীমান্তে উত্তেজিত জনতার বিপুল উপস্থিতি এবং আক্রমণাত্মক অবস্থান উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ফসল কেটে নেওয়া, গাছ কেটে ফেলার মত ঘটনাও ঘটেছে। সরেজমিনে সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ ও আতঙ্ক রয়েছে। সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও যেকোনো সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় বিএসএফ এর কাঁটাতারের বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতেও ইস্যু হচ্ছে। সীমান্ত নিয়ে উদ্বেগের কারণ ১৮ই জানুয়ারি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে উভয় দেশের কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অংশ নেয়। বিজিবির হিসেবে বাংলাদেশ অংশে ১০-১৫ হাজার মানুষ সীমান্তে উপস্থিত হয় সেদিন।স্থানীয়রা বলছেন, সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় বিএসএফ। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-মালদহ সীমান্তে দুই দেশের জনগণের মধ্যে এরকম অবস্থান ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। ৫ই অগাস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার অন্যান্য জায়গার চেয়ে ভৌগলিক কারণে দহগ্রামের বাংলাদেশি নাগরিকদের দুশ্চিন্তা অনেক বেশি কারণ পুরো ইউনিয়নটি ভারতের ভেতরে অবস্থিত। ২২ বর্গকিলোমিটারের এই ভূখণ্ডে প্রায় হাজার বিশেক বাংলাদেশি নাগরিকের বসবাস। ভারতে অভ্যন্তরে তিন বিঘা করিডোর ব্যবহার করে বাংলাদেশের দহগ্রাম ইউনিয়নে প্রবেশ করতে হয়। স্থানীয়রা শূন্যরেখায় বেড়া দিতে গেলে দুই দেশের জনগনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএসএফ এবং বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এমন পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা পরিষদ বিজিবিকে টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে ২ দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে মুখোমুখি অবস্থান করিয়ে যুদ্ধের দারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে যা বাংলাদেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের ওপর হামলা: গত ১৯ জানুয়ারি থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সম্মানিত শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বশীল প্রতিনিধি তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি, যা চরম অবহেলার বহিঃপ্রকাশ। সর্বশেষ ২৬ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে রাজধানীর শাহবাগে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে তাতে সবাই মর্মাহত। কারন একটি স্বাধীন দেশে সবার মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা লাভের অধিকার রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের মত সম্মানিত ব্যক্তিরাও চরমভাবে অবহেলিত। প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন : সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডের বেতন স্কেল বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে তারা এই দাবি তুলে ধরেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন, তাদের বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে শ্রেণিবদ্ধকরণ অন্যায় এবং শিক্ষকতা পেশার জন্য অবমাননাকর।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা সরকারকে আল্টিমেটাম ও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দুপুর ২টার মধ্যে দাবি আদায় করা না হলে আন্দোলন আরও বাড়বে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা শাহবাগের দিকে অগ্রসর হলে শাহবাগ থানার কাছে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখোমুখি হন। বাধায় দমে না গিয়ে তারা ব্যারিকেডের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। বিক্ষোভ চলার সময় এক শিক্ষক বলেন, “আমাদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বেতন দেওয়া হয়, যা আমরা শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে পারি না। দশম গ্রেড আমাদের দাবি।” সুনামগঞ্জের বারুইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরহাদ হোসেন একই সুরে বলেন, “আমরা শিক্ষক সমাজের অংশ। আমরা কেন তৃতীয় শ্রেণিতে থাকব? শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে রেখে দেশ গড়া সম্ভব নয়।” চাকরিতে ১৩তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত ও বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে শাহবাগ সড়ক অবরোধ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবির বাস্তবায়ন না হলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ অনশন করার ঘোষণাও দেন তারা। এসময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুন নাহার লিপি জানান, আগামী ৩১ জানুয়ারি কনসালটেশন কমিটির একটি মিটিং আছে। সেখানে যদি দাবি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ অনশন করা হবে। ছাত্র উপদেষ্টা - বিএনপি মুখোমুখি : গণতন্ত্রে উত্তরণেই নানা সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিয়েছে। ছাত্রনেতারা কোনো প্রস্তাব দিলে বিএনপির নেতৃত্ব এর বিরোধিতা করছেন। আবার বিএনপির প্রস্তাবও সুনজরে দেখছেন না ছাত্রনেতারা। সম্প্রতি বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচনের জন্য আরেকটি সরকার লাগবে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে, খুবই ভালো কথা। কিন্তু সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। এই বক্তব্যের পর তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বলেছেন, বিএনপির মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত অরেকটি এক–এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। বিএনপি কয়েক দিন আগে ‘মাইনাস টুর’ আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি এক-এগারো সরকারের প্রস্তাব করছে। এক এগারো সরকারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল বিএনপি। সে ক্ষেত্রে তারা আরেকটি ১/১১কে সাদরে ডেকে আনবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ করা হয় যে বিভিন্ন পক্ষ রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে তাদেরই ক্ষমতার বাইরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। শত্রু দেশকে বন্ধু এবং বন্ধু দেশকে শত্রু বানিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি: বর্তমান অসাংবিধানিক সরকার ৭১ এর গণহত্যাকারীদের সাথে হাত মিলিয়েছে। অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামরিক চুক্তি করে প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ সম্পর্ক তৈরি করছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের সাথে JF-17 যু্দ্ধবিমান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত সহ বিভিন্ন সামরিক যন্ত্রাংশ নেয়ার যে অসম চুক্তি করেছে সরকার তা দেশের জন্য উদ্বেগ জনক। ভৌগলিক ভাবে ভারত বাংলাদেশের তিন দিকেই অবস্থিত, ভারত পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ওপর আমাদের দেশকে নির্ভর করতে হয় এটা অস্বীকার করা যায় না। বাংলাদেশের অনেক উন্নয়নমুলক কাজে তাদের বিনিয়োগ আছে। বিভিন্ন পন্যে ভ্যাট বাড়িয়ে জনগনের জীবনকে অতিষ্ঠ করেছে এই সরকার। জনগনের ওপর চাপ দিয়ে, মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনে ভারতের সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে, উত্তেজনা বাড়িয়ে জনগনের জীবন কারা বিপন্ন করতে চাই তা এখন সবার কাছে পরিষ্কার। এভাবে দুইদেশকে উস্কে দিয়ে উপদেষ্টা রা পাকিস্তানের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত। স্বাধীনতা বিরোধীদের লক্ষ্যই এটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ রাতভর সংঘর্ষ : গত ২৭ জানুয়ারি রাত ১০ টা থেকে রাত ৩:৩০ পর্যন্ত নীলক্ষেত নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত রোববার রাতভর সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ২২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ছাড়াও আহত হন পথচারী ও সাংবাদিক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজ্জ্বল (৩০), সাইদ মুন্সি (২২) ও রাকিব (২৪) ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। আর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন ১৯ জন শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন রিপন চৌধুরী, ইরফান (২০), পথচারী উজ্জ্বল (৩২), আশরাফ (২০), মেহেদি (২৩), ফয়সাল আহমেদ (২২), সাদ (২২), হৃদয়(২৩), মাহিন (২২), ইসমাইল, ইমতিয়াজ, তোফায়েল আহমেদ (সাংবাদিক বাংলাদেশ টাইমস), ইব্রাহিম (২৩), রিশাদ (২৩), মিরাজ (২৩), আমানুল্লাহ (২২), হিমু (২৩), সাব্বির হোসেন (২৪) ও রাকিব (২৪)। ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে তিনজন ভর্তি রয়েছেন। গত রোববার রাতে নীলক্ষেত মোড় এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এই বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। এদিকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে রাত ১২টার পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভের পর তাঁরা কলেজে ফিরে যান। দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে মাঝে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ সময় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরে পুলিশকে সহায়তা করতে চার প্লাটুন বিজিবিও মোতায়েন করা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে হামলায় জড়িত সবার বিচারের দাবিতে আজ সকাল ৯টা থেকে নিজ নিজ কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন নয়, ৬ দফা দাবি দিয়ে তা পূরণের জন্য ৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের আজকের সব চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নিহত: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারকে (২৬) গুলি করে হত্যার ঘটনায় কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকেও কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে না। খুলনা নগরের কেডিএ এভিনিউ সড়কের তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার। ঘটনাস্থলে এখনো ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে। এসকল ঘটনা থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশ এখন কোন পর্যায়ে আছে। চারপাশে এত বিশৃঙ্খলা, হত্যা, নির্যাতনের মুখোমুখি বাংলাদেশের জনগন এর আগে কখনও হয়নি। আগামী দিনে এর থেকে বেশি কিছু হবেনা তা বলা যায় না। আমরা কি দেশটাকে অন্ধকারে ঠেলে দেবো? কখনও না...তাই আমাদের উচিত স্বপ্নের বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া।