সমকামীদের তৎপরতায় সর্বনাশের পদধ্বনি

২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

নাটোরে স্কুল-মাদ্রাসার দুই ছাত্রীর সমকামী বিয়ে নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তোলপাড় হয়েছিল সারা দেশে। স্থানীয় এক হাইস্কুলের ছাত্রীর সঙ্গে সিলেটের মাদ্রাসাছাত্রীর প্রেম চলছিল সাত মাস। এর সূত্র ধরে সিলেটের ওই ছাত্রী চলে যায় নাটোরে স্কুলছাত্রীর বাসায়। মাদ্রাসাছাত্রী জানায়, ‘আমাদের পরিচয় হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। স্কুলছাত্রী আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে অমি রাজি হয়ে যাই।’ বিষয়টি জানাজানি হলে দুই ছাত্রীকে নেওয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। পরে তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গত বছরের মে মাসে রাজধানীর এক কলেজের একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রীর নিখোঁজ হওয়া চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে দেশজুড়ে। সমকামিতার সম্পর্কের বিষয়টি চোখে পড়ে দুই পরিবারের সদস্যদের। বিচ্ছেদের জন্য চাপ দেওয়া হয় দুই পরিবার থেকেই। একপর্যায়ে দুজন চলে যান সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে। দুই বোন পরিচয়ে পড়াশোনার কথা বলে ভাড়া নেন বাসা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয় দুই পরিবার। প্রযুক্তির সহায়তায় সন্ধান মেলে তাদের। এর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে কেরানীগঞ্জে ২৮ সমকামী আটকের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কেবল এ তিনটি ঘটনাই নয়; সর্বনাশের প্রতিধ্বনি এখন বহু স্থানে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ছড়িয়ে সমকামীদের জাল। বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর। অধিকাংশই শিক্ষার্থী। এগিয়ে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীরা। তারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন একসঙ্গে। ফেসবুক, টুইটার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জাসরসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালাচ্ছেন তৎপরতা। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করেন ছদ্মনাম ও ফেক আইডি। বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে তারা খুঁজে নিচ্ছেন সঙ্গী। মূল প্ল্যাটফরম বিওপি (বয়েজ অব বাংলাদেশ)। ২০১৪ সালে রূপবান নামের একটি ম্যাগাজিন আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশে এ অপকর্মকে উৎসাহ দেওয়া শুরু হয়। ২০১৬ সালে ওই ম্যাগাজিনের সম্পাদক জুলহাজ মান্নান হত্যার শিকার হন। বন্ধ হয়ে যায় রূপবানের প্রকাশনা। তবে থেমে থাকেনি সমকামীদের তৎপরতা। বিওপি ছাড়াও ঢাকা সমকামী গে গ্রুপ কমিউনিটি, প্যারেন্টস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস অব এক্স-গেম (পিএফওএক্স), সমকামী, এমএসএমজিএফ, এলজিবিটি.ম্যাচমেকার, লেসবিয়ান ইনসাইড ঢাকা, ঢাকা লেসবিয়ান গার্ল সার্ভিস, লেসবিয়ান ডেটিং ঢাকা প্রভৃতি সাইটে এ অপতৎপরতাকে সমর্থন করা হচ্ছে। চালানো হচ্ছে প্রচার। খুঁজে দেওয়া হচ্ছে সঙ্গী। মনোবিজ্ঞানী আজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের আইনে সমকামিতা নিষিদ্ধ। সামাজিকভাবেও এটি ঘৃণিত। বিকৃত রুচির কার্যক্রম। তিনি বলেন, আইন করে সবকিছু বন্ধ করা যায় না। সমকামিতা একটি জটিল ইস্যু। এটি বন্ধ করতে হলে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মীর ইদরিস নদভী বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে সমকামিতা একটি গর্হিত কাজ। জেনার চেয়েও বড় অপরাধ। মৃত্যুদণ্ডের অপরাধ। আমাদের দেশে বেআইনিভাবে সমকামিতা চলছে। এতে আমাদের দেশের সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে তরুণ সমাজের স্বাস্থ্য। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে সমকামিতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে সমকামিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের দেশে যদি সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে কঠোর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরুষ সমকামীরা দুটি সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে। একটি হচ্ছে ‘টপ’। আরেকটি ‘বটম’। তারা নিজেদের মধ্যে একজন আরেকজনকে মেইল-ফিমেইল হিসাবে জানেন। অপরদিকে পুরুষ সমকামীদের চেয়ে নারী সমকামীদের কার্যক্রম বেশি গোপনে চলে। ছেলে সমকামীদের ভেতর দ্রুত বিয়ের প্রবণতা কাজ করলেও মেয়েদের মধ্যে বিয়ের আগ্রহ তুলনামূলক কম। ‘সমকামী’ নামক ফেসবুক পেজে সদস্য সংখ্যা ৩ হাজার ৬০০। এ পেজের অন্যতম সদস্য মায়াবী কন্যা মিশু। ১৬ জানুয়ারি তিনি এখানে লিখেন, ‘আমি একজন ভালো মানের মিশেল চাই। কেউ আছো?’ পরদিন সাফা ইসলাম লিখেন, ‘অ্যানি ওয়ান ফ্রম পঞ্চগড়?’ কমেন্ট বক্সে ফারহান এলক্স বলেন, ‘আমিও পঞ্চগড়ে।’ নীলিমা নীল লিখেন, ‘আমি ছেলে। উত্তরায় থাকি। একজন ছেলে লাগবে। ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।’ ঢাকা সমকামী গে গ্রুপ কমিউনিটিতে ১ নভেম্বর রোকশানা নামের একজন লিখেন, ‘আজ সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বাসা ফাঁকা, টপ চাই, যে ভার্জিন...। মধ্য বাড্ডা, বয়স ২০ বছর।’ পূজা সাহা নামে একজন বান্ধবীসহ ছবি পোস্ট করে বলেন, ‘উই আর লেসবো।’ ভার্সেটাইল এথিক্স নামক আইডি থেকে একজন লিখেন, ‘আজকে সারা দিন বাসা খালি। কেউ আসতে চাইলে ইনবক্স করো। লোকেশন-ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা। মারিয়া আক্তার নামের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন-‘আই লাভ লেসবিয়ান।’ কমেন্টে মোহনা রায় কনা বলেন, ‘কোনো আপুর ছেলে বা কোনো ছেলের মেয়ে লাগলে সরাসরি ইনবক্স করুন।’ সাদিয়া আয়মান লিখেন, ‘নিড অ্যা সিনিয়র লেসবো।’ একই পোস্টের কমেন্টে নাফিসা মৃধা বলেন, ‘রামপুরার আশেপাশে কেউ লেসবিয়ান আছো?’ সাদিয়া জাহান লিখেন, ‘আই নিড নাইচ গার্ল।’ তুষার শুভ লিখেছেন, ‘গ্রুপে নরসিংদী সদরের টপ/ভার্সেটাইল কেউ আছেন? কমবয়সি টি/ভি পার্টনার দরকার। নরসিংদী আছি কিছুদিন।’ তুষার শুভ নামের এক সমকামী বলেন, ‘যখন থেকে যৌনতা উপলব্ধি করতে শুরু করেছি, তখন থেকেই কোনো পুরুষকে কল্পনা করতাম। কলেজ লেভেলে যখন হাতে স্মার্টফোন আসে, তখন ফেসবুকের কল্যাণে জানতে পারি যৌন আকর্ষণের বিভিন্ন ক্যাটাগরি। ভার্সিটিতে ওঠার পর খুলে ফেললাম ফেক আইডি। তারপর থেকে সমকামীপাড়ার বাসিন্দা আমি।’ তুষার শুভ আরও বলেন, শুরুতে ভাবতাম এখানকার সবাই তো একই অনুভূতির। তাই একে অপরকে ঠকাবে না। কিন্তু আমার ওই ভাবনা ছিল ভুল। আমাকে ছাড়া বাঁচবে না বলা ছেলেটির মরার খবর পাইনি এখনো। দিব্যি ভালো আছে আমাকে ছাড়াই। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভুগছি ভীষণ উৎকণ্ঠায়। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে রোমান নামের একজন বলেন, সে (আমার সমকামী) মেডিকেল স্টুডেন্ট, উচ্চবংশীয়। অন্যদিকে আমি পাতি স্কুল-কলেজে পড়া লো মিডল ক্লাস ফ্যামিলির। তিনি বলেন, ভালোবাসা শব্দটা শুনলেই এখন আমার ভীষণ ভয় করে। সমকামী সত্তা নিয়ে ভালোবাসার কথা ভাবাও ধৃষ্টতা। মাসুমা ইসলাম নদী নামের একজন বলেন, আমার জীবনে যারাই এসেছিল, তারা সবাই আমাকে আলো ভেবে পথ চিনে বাড়ি ফিরে গেছে। নিঃসঙ্গ ল্যাম্প পোস্টের মতো বহুকাল দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভেবেছি, বিধাতা আমার জন্য কাউকে বানায়নি। সমকামীদের যারা সংগঠিত করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ড্যানি (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, আমরা নিজেদের মাইনোরটি কমিউনিটির লোক মনে করি। নিজেদের সুরক্ষায় গড়ে তুলেছি ওয়ার্ক ফর মাইনরিটি (এলজিবিটি) নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠন লিঙ্গগত বৈষম্যের শিকার হওয়া ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে ট্রেনিং দেয়। এ সংগঠনকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করে বিদেশি কয়েকটি এনজিও। জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সমকামিতা আমাদের দেশে আইনসিদ্ধ না। কেউ পরিস্থিতির শিকার হলে আমরা আইগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমকামীদের সাম্প্রতিক তৎপরতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।