গুলিতে ঝাঁজরা ইমনের পা সংসারের হাল ধরবে কে

২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ইমন কবীর। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। মা-বাবার অভাবের সংসারের হাল ধরবেন। কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার আগেই তার মাথায় চাপে সংসারের বোঝা। পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় এসে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন ইমন। এর মধ্যে শুরু হয় আন্দোলন। তাতেও যোগ দেন-আহতদের বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে পৌঁছে দিতেন তিনি। একদিন এক শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের সময় ডান পায়ে একাধিক গুলি লাগে তার। সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নগুলোও যেন গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। কয়েক মাস ধরে পঙ্গু হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন তিনি। কবে নাগাদ সুস্থ হবেন, তাও অনিশ্চিত। ইমনের এখন একটাই ভাবনা-গুলিবিদ্ধ পায়ে কী করে বইবেন সংসারের বোঝা। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে দেখা যায়, ইমন একটি বেডে বসে আছেন। তার ডান পা রড আর নাটবল্টু দিয়ে মোড়ানো। ইমন জানান, পরিবারের একমাত্র সন্তান তিনি। তাই মা-বাবার আশা-ভরসা এবং স্বপ্নও তাকে ঘিরে। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনার খরচ চালাতেন তার বাবা। একপর্যায়ে তাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই নিজের পড়ার খরচ বহন এবং সংসার চালাতে ঢাকায় এসে পাঠাওয়ের রাইড শেয়ারিং করতে শুরু করেন। জুলাইয়ে ছাত্রজনতার আন্দোলন শুরু হলে ইমনও যোগ দেন। নিজের বাইকে বিনামূল্যে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিতেন। ১৯ জুলাই বাড্ডা-আফতাবনগর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলিতে এক শিক্ষার্থী আহত হন। তাকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ ইমনকে ঘিরে ফেলে। খুব কাছ থেকে তার পায়ে পরপর কয়েকটি গুলি করে। পরে ইমনসহ আরও গুরুতর আহত তিনজনকে অ্যাম্বুলেন্সে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখনো পুলিশ বাধা দিয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরও গুলি করতে চেয়েছিল। ওই সময় ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে পুলিশ পিছু হটে। ইমন বলেন, সরকার যে পরিমাণ আর্থিক সহায়তা করেছে, তা একেবারেই অপ্রতুল। কবে নাগাদ সুস্থ হব, তাও অনিশ্চিত। উন্নত চিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য আহতদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে জুলাই আন্দোলনে শহিদপরিবার ও আহতদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। কারণ, ছাত্র-জনতার জন্যই নতুন একটি দেশ আমরা পেয়েছি। ইমনের মা স্বপ্না কবীর জানান, অভাবী সংসারে খেয়ে-না-খেয়ে একমাত্র সন্তানকে পড়াশোনা করিয়েছি। স্বপ্ন দেখতাম, ছেলে পড়াশোনা করে বিদেশ যাবে, সংসারের হাল ধরবে। এখন মাসের পর মাস পঙ্গু হাসপাতালে পড়ে আছি। ছেলে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছে। এজন্য মা হয়ে গর্ব করি। তবে শঙ্কায় আছি ছেলের স্বপ্ন, আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কি না। পরিবারের হাল কে ধরবে। তার পায়ের যে অবস্থা-কবে নাগাদ ভালো হবে, এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই। দেশের মানুষ যেন আমার সন্তানকে ভুলে না যায়, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মায়ের কান্না দেখে ইমন বলছিল, আওয়ামী গুন্ডাদের বর্বর তাণ্ডবের কথা এখনো মনে পড়ে। রাতে ঘুমাতে পারি না। চোখ বুজলেই যেন গুলাগুলির শব্দ শুনি। আর হতাহতদের ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকারে আঁতকে উঠি। ইমনের পায়ে গুলি লেগে অনেকগুলো গর্তের মতো হয়েছে। কয়েকটিতে রক্ত-পুঁজ জমেছে। পা নড়াচড়া করলেই ব্যথা বাড়ে। ইমন জানান, খুব সাবধানে নিজেই তার ক্ষতস্থান পরিষ্কার করেন। কারণ, একটু উনিশ-বিশ হলেই প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। বিশেষ করে রাতে অসাবধানতায় রডে চাপ পড়লে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়।