পানির নিচে ৪ মাস, জার্মান ব্যক্তির বিশ্বরেকর্ড

২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

পানির নিচে দীর্ঘ সময় বসবাস করে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন এক জার্মান অ্যারোস্পেস ইনিঞ্জনিয়ার। পানামা উপকূলে একটি নিমজ্জিত ক্যাপসুলে ১১ মিটার পানির গভীরে ১২০ দিন অতিবাহিত করে এ রেকর্ড গড়েন তিনি। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রুডিগার কোচ নামে ৫৯ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি ৩০ বর্গমিটার আকারের সেই ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসেন। আর ইতোমধ্যেই তার এই কৃতিত্বকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে রেকর্ডটি ধরে রেখেছিলেন জোসেফ ডিটুরি নামে এক আমেরিকান। তিনি ফ্লোরিডার লেগুনে একটি সাবমেরিন লজে ১০০ দিন বসবাস করে রেকর্ডটি গড়েছিলেন। তার সেই রেকর্ড ভেঙে সমুদ্রের নিচে দীর্ঘদিন বাস করে দারুণ উচ্ছ্বসিত নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়া রুডিগারও। ‘এটা একটি দারুণ অ্যাডভেঞ্চার ছিল এবং এখন যেহেতু এটা শেষ, তাই এক ধরনের আফসোস হচ্ছে’-পানির উপরে উঠে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি। রুডিগার বলেন, সেখানে আমি আমার সময়টা খুব উপভোগ করেছি। এটা খুবই সুন্দর, যখন সবকিছু শান্ত হয়ে যায় এবং সাগরে আলো জ্বলে ওঠে। ক্যাপসুলের পোর্টহোলের মাধ্যমে তিনি সাগরের যে প্রশান্ত এবং মোহনীয় দৃশ্যগুলো দেখেছিলেন, সেগুলোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেন, এটা বর্ণনা করা যায় না। আপনাকে এটা নিজেকেই অনুভব করতে হবে। পানির উপরে উঠে একটি স্যাম্পেইন হাতে নিয়ে রুডিগার তার এ অর্জন উদযাপন করেন এবং তারপর সুখে আত্মহারা হয়ে আবার ক্যারিবিয়ান সাগরে লাফিয়ে পড়েন। এরপর একটি নৌকায় তাকে তুলে আনা হয় এবং শুকনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার জন্য একটি পার্টির আয়োজন করা হয়। এদিকে রুডিগার যে ক্যাপসুলটিতে এতদিন পানির নিচে বসবাস করেছেন, সেটি ছিল আধুনিক সুবিধা সম্বলিত। এতে একটি বিছানা, টয়লেট, টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং এমনকি একটি এক্সারসাইজ বাইকও ছিল। একটি টিউবের মাধ্যমে ক্যাপসুলটি অন্য চেম্বারের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। খাবার সরবরাহ এবং দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য এতে একটি প্রবেশপথের ব্যবস্থাও ছিল। যার মধ্যমে একজন ডাক্তারও ক্যাপাসুলটিতে যাওয়া-আসা করেছেন। ক্যাপাসুলটি মূলত সৌর প্যানেলের সাহায্যে চলত এবং এতে একটি ব্যাকআপ জেনারেটর ছিল, তবে কোনো শাওয়ার ছিল না। ক্যাপসুলটিতে ঢোকার আগে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুডিগার বলেছিলেন, এটি মানব জীবনের জন্য নতুন ধারণা সৃষ্টি করবে এবং সাগরে মানুষের বসবাসের সম্ভাবনা সম্পর্কে নতুন চিন্তাভাবনার দ্বার খুলে দেবে। আমরা প্রমাণ করতে যাচ্ছি যে, সাগরে মানব বসবাস সম্প্রসারণের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। রুডিগারের চ্যালেঞ্জে অনেকগুলো ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ক্যামেরাগুলো তার দৈনন্দিন জীবনধারণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে। আর এটাও নিশ্চিত করা যায় যে, তিনি ১২০ দিনের মধ্যে কখনো ভূপৃষ্ঠে পা রাখেননি। এই দীর্ঘ সময় রুডিগার তার বিছানার পাশে জুলস ভার্নের ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ বইয়ের একটি কপি রাখেন। বইয়ের গল্পের নায়ক ক্যাপ্টেন নেমোরের একজন চরম ভক্ত এ জার্মান ব্যক্তি। রুডিগার জানান, ১৯ শতকের এই বইটি পানির নিচে তার অভিযানে একটি উপযুক্ত সঙ্গী ছিল।