শচীনের রেকর্ড কি ভাঙতে পারবে কেউ?
অনেকটা নদীর পাড়ের মতো— এপাড় ভাঙলে গড়ে ওপাড়। অন্য সবকিছু মতো ক্রিকেটেও তেমন। কেউ একজন নিজেকে সবার ওপরে নিয়ে যান, অন্য কেউ একজন এসে তাকে ছাপিয়ে যান। রেকর্ড ভাঙলেই না গড়বে নতুন রেকর্ড। এই ভাঙা-গড়ার খেলায় একটু ব্যতিক্রম শচীন টেন্ডুলকার। তিনি রেকর্ড তো ভেঙেছেনই, গড়েছেনও এমন কিছু- যা আর কারও পক্ষে এখনো অসম্ভবই রয়ে গেছে। বাকিদের জন্য ‘অসম্ভব’ করে তোলা সেই রেকর্ডের খেরোখাতায় এখনো সবার ওপরে শচীন। ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান, সবচেয়ে বেশি ম্যাচ এবং সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি— সবখানেই একচ্ছত্র আধিপত্য লিটল মাস্টারের। একজন পেশাদার ক্রিকেটারের একটি সেঞ্চুরিও আরাধ্য, অন্যদিকে শচীনের নামের পাশে শত সেঞ্চুরি। এবার আসি মূল কথায়, ২০১৩ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলা শচীনকে কি কেউ ছাপিয়ে যেতে পারবেন? হয়ত পারবেন। শচীন ক্রিকেট ছেড়েছেন এক যুগ আগে। এতদিনে ভারতের কিংবদন্তিকে টপকে যেতে পারেননি কেউই। একজন অবশ্য আশা জাগিয়েছেন, স্বপ্ন দেখছেন। সম্ভাবনা কিংবা শঙ্কা দুটোই আছে। হয়ত তিনিই ভেঙে দেবেন ‘সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি রেকর্ড’। শচীনকে টপকে তিন ফরম্যাটে আনবেন সবচেয়ে বেশি রান। অথবা সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের তালিকায় শচীনের আগে উচ্চারিত হবে তার নাম। বলা হচ্ছে কোহলির কথা। শচীনের ‘শত সেঞ্চুরির’ রেকর্ডে উত্তরসূরি যে তিনি হতে পারেন, তার আভাস বেশ পুরোনো। তবে কথা কিন্তু থামছে না। ৮১ সেঞ্চুরি করে ১০০ সেঞ্চুরির পথে হাটছেন কিং কোহলি। আর মাত্র ১৯, তবেই ছোঁবেন কিংবদন্তি শচীনের সেই ‘সেঞ্চুরির মাইলফলক’। যে রেকর্ডকে এখন অবধি ভাবা হয় আর কোনো ক্রিকেটার সেটি ভাঙতে পারবেন না। ২০১৩ সালে শচীন যখন ক্রিকেট ছাড়েন তখন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা জানিয়েছিলেন, ক্রিকেটে এই রেকর্ড কেউ ছুঁতেও পারবে না। তার ভাষ্য মতে, ‘শচীন শুধু সর্বকালের সেরাই নয়, ওর রেকর্ড কারো সঙ্গে তুলনা চলে না। কোনো বিতর্ক নয়। আমি মনে করি না, এখনকার ১৬ বছর বয়সি কোনো ছেলে ৪০-৪১ বছর বয়স পর্যন্ত এতটা ধারাবাহিক খেলে শচীনকে পেছনে ফেলতে পারবে।’ শচীনের ওয়ানডেতে ৪৯ সেঞ্চুরি যখন ভেঙে দেন কোহলি, ২০২৩ সালে তখন নতুন করে কথাটি উঠেছিল। আগেরবারের মতো এবারও কোহলির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন ক্যারিবিয়ান তারকা লারা। নিজের কথার যুক্তিও টেনেছেন, ‘কোহলির বয়স এখন কত? ৩৫ বছর? তার অ্যাকাউন্টে আছে ৮০টি সেঞ্চুরি (এখন ৮১)। টেন্ডুলকারকে ছুঁতে এখনো ২০টি শতরান দরকার। প্রতি বছর পাঁচটি সেঞ্চুরি করলে টেন্ডুলকারের সমান হতে আরও চার বছর লেগে যাবে। তখন কোহলির বয়স হবে ৩৯ বছর। কঠিন কাজ, খুব কঠিন কাজ। বয়স কারোর জন্য থেমে থাকে না। কোহলি ভাঙবেন আরও অনেক রেকর্ড, কিন্তু ১০০ সেঞ্চুরি সবচেয়ে কঠিন।’ শচীনের রেকর্ড ভাঙতে ধারাবাহিকভাবে অন্তত ২৫ বছর খেলতে হবে বলে বিশ্বাস কপিল দেবের। শচীনের অবসরের সময় ভারতের কিংবদন্তি বলেছিলেন, ‘শচীনের মতো অর্জন করতে হলে কাউকে অন্তত ২৫ বছর টানা খেলে যেতে হবে। কিন্তু এখনকার ক্রিকেটাররা কি এতদিন টিকে থাকতে পারে? এখন তো অনেকে পর্যাপ্ত টেস্টও খেলে না।’ খোদ যাকে নিয়ে বাজি, সেই কোহলিও হার মেনে নিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যয় পুষে রেখেছেন মনের কোণে। ২০১৭ সালে কোহলি নিজেকে নিয়েই বাজি ধরেছিলেন, ‘শচীনের রেকর্ড স্পর্শ করা অসম্ভব। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে ২০০টি টেস্ট খেলেছেন। ১০০টি সেঞ্চুরি। ভাবা যায় না, কী অসাধারণ পরিসংখ্যান! আমার মনে হয় না যে শচীনের মতো এতদিন ক্রিকেট খেলে যেতে পারব। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে পার্থক্য গড়েই খেলাটা ছাড়বো।’ কোহলির ক্যারিয়ারও আছে পড়ন্তের দিকে। টি-টোয়েন্টির পাঠ চুকিয়ে ফেলেছেন ভারতের তারকা ব্যাটার। ওয়ানডে ও টেস্ট খেলে যাচ্ছেন নিয়মিত। তবে চোট, ফর্মহীনতা এবং পারিপার্শ্বিক চাপ সামলে কোহলির গতি স্লথ হয়ে পড়েছে। শচীনের ‘অক্ষুন্ন’ রেকর্ড ভাঙায় যাকে নিয়ে স্বপ্ন, সেই কোহলি কতদিন ব্যাট চালাতে পারেন সেটাই দেখার। ১০০-৮১—শচীনের সেই রেকর্ড থেকে মাত্র ১৯ শতক দূরে কিং কোহলি।