রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে দ্রুত আলোচনা চায় বিএনপি

২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিভিন্ন কমিশনের কিছু ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রস্তাব জটিলতা বাড়াতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। দেশকে ৪টি প্রদেশে ভাগ করার যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটি দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে বলেও মনে করছেন দলটির নেতারা। বিএনপি আশা করছে, রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যূতে সরকার দ্রুতই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসবে। এর পাশাপাশি সরকারের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির যে উদ্যোগ, এতদিন পরে এসে সেটাও 'সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক' বলে মনে করছেন নেতারা। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বলে জানা গেছে। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানা গেছে, বৈঠকে বেশ কয়েকটি এজেন্ডা থাকলেও মূলত দুটি এজেন্ডার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি হচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র। অন্যটি হচ্ছে, সরকারের তরফ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডাকে গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেদিন বিএনপির তরফ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে যে বিষয়গুলো জানানো হয়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সেটা তিনি তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টার সর্বদলীয় ওই বৈঠকে ঘোষণাপত্র নিয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি। সেখানে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেকোনো গণঅভ্যুত্থান-গণআন্দোলনের রাজনৈতিক দলিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতৈক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে এর আইনি ভিত্তি কী হবে, সে ব্যাপারেও যথেষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এবং অন্তর্রর্তী সরকার গঠনের এত সময় পরে এসে কেন এই উদ্যোগ, সর্বদলীয় বৈঠকে সেটাও তিনি জানতে চান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে একটি 'ডকট্রিন অব নেসেসিটি'র ভিত্তিতে। এখন সাড়ে পাঁচ মাস পরে তারা যে ঘোষণাপত্র দিতে চান, সেটি সম্পূর্ণভাবে অপ্রাসঙ্গিক। এখন এটার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তারা মনে করেন না। যদি তারা (বৈষম্যবিরোধী ছা্‌ত্র আন্দোলন) সেই সময় এ ধরনের কোনো ডিক্লারেশন দিতো, সেটি নিয়ে তখন হয়তো একটা রাজনৈতিক মতৈক্য তৈরি হতে পারতো। কারণ, সবাই তখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন চেয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ফখরুলের বৈঠকে এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হলেও দেশ ও সরকারকে অস্থিতিশীল করতে তাদের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এর বাইরেও দেশে বিতর্ক সৃষ্টির নানা চেষ্টা আছে। এর আগে সংবিধান বাতিল করার দাবি এসেছে। কেউ কেউ বিদ্যমান সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার কথা বলেছে। এর পরপরই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। রাজনৈতিক মতৈক্য না হলে এটিও এক ধরনের বিতর্ক-বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। জানা গেছে, সরকার রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন তাদের রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। অনেক রিপোর্টের বিষয়বস্তু ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে চলে এসেছে। বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, সময়ের চাহিদা ও বাস্তবতাকে মাথায় রেখে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারে জাতির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এর অংশ হিসেবে ২০২২ সালেই তারা ৩১ দফা রূপরেখা দিয়েছে। এই ৩১ দফাই হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারের সবচেয়ে বড় দলিল। এমনকি এই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পরে কমিশনকে সহযোগিতা করতে তারা নিজেরাও দলীয়ভাবে ছয়টি সংস্কার কমিটি গঠন করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কার আনা যেতে পারে, সেসব সুপারিশ তারা ইতোমধ্যে কমিশনের কাছে তুলেও দিয়েছে। বিএনপি আশা করছে, বিভিন্ন কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকার শিগগিরই একটি রাজনৈতিক সংলাপ আহ্বান করবে। যেখানে এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবগুলো গৃহীত হবে। এদিকে দেশের পুরোনো চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশ করার সুপারিশের কথা ভাবছে সরকার গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ব্যবস্থাপনা প্রদেশের হাতে দেওয়ার পক্ষে এ কমিশন। এই চার প্রদেশ হলো- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি নেতাদের অভিমত, এটা অপ্রয়োজনীয় প্রস্তাব। বাংলাদেশে এটার কোনো বাস্তবতা নেই, বরং এটা নানান ধরনের জটিলতা বাড়াবে। এতে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অঞ্চলভিত্তিক নানা জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান হতে পারে, যারা সেখানে নিজেদের টেরিটোরি ঘোষণা করতে পারে। যেগুলোর ওপরে একটা পর্যায়ে হয়তো সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সুতরাং এটা বিতর্ক আরও বাড়াবে এবং রাষ্ট্রের যে সার্বভৌম অস্তিত্ব, সেটাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। তাই এটার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে বিএনপি মনে করে না। জানা গেছে, বৈঠকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরনগঞ্জ সীমান্তে সংঘর্ষ, বিএসএফের গুলি-বাংলাদেশিকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা; দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া; সম্প্রতি মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ থেকে 'আদিবাসী' শব্দ সংবলিত একটি গ্রাফিতি বাদ দেয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্ক ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীর ওপরে চীন এবং অরুণাচলের সিয়াংয় নদীর ওপরে ভারতের বাঁধ নির্মাণের 'উচ্চাভিলাসী' প্রকল্প নিয়েও আলোচনা করেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। তাদের অভিমত, বাংলাদেশের ওপর এর ব্যাপক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে।