যুদ্ধবিরতির মাঝেই পশ্চিম তীরে ইসরাইলের উচ্ছেদ অভিযান
গাজায় চলছে ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি। এর মাঝেই ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলের শহর জেনিনে সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে। বুধবার জেনিন শহরের মেয়র মোহাম্মদ জারর এ অভিযোগ করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেয়র জারর বলেন, ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনী জেনিন শরণার্থী শিবিরের বেশ কয়েকটি পাড়া-মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার কাজ চালাচ্ছে’। ‘উচ্ছেদ হওয়া এসব ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম অংশে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং আমরা তাদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা চালাচ্ছি,’ যোগ করেন মেয়র। মেয়র মোহাম্মদ জারর জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর এহেন ‘অপরাধের’ বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একই সঙ্গে অভিযোগ করে বলেছেন, শিবিরের সম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনী শিবিরে ভারি যন্ত্রপাতি এনে অবকাঠামো ও সড়কগুলো ধ্বংস করছে’। মেয়র অভিযোগ করে আরও বলেছেন, ‘দখলদার ইসরাইলি বাহিনী শরণার্থী শিবির ঘিরে রেখেছে এবং এখানকার চিকিৎসক, বাসিন্দা ও রোগীদের আটকে রেখেছে। জেনিন এখন একটি ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে, যেখানে কেউ চলাফেরা করতে পারছে না’। জেনিনে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি বাহিনীর এই অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আয়রন ওয়াল’ নামের এই অভিযানটি কয়েক দিন ধরে চলবে। দখলদার বাহিনীর এমন ঘোষণা ও চালানো অভিজানে পশ্চিম তীরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কারণ ইসরাইল গাজা উপত্যকায় ‘গণহত্যার মতো আগ্রাসন’ চালিয়েছে। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৪৭,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ১,১০,৭০০ জনেরও বেশি। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা এই আগ্রাসনের অবসানে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ে একটি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। যা গাজায় ইসরাইলের হামলা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। তবে তার আগে পশ্চিম তীরে চালানো ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় ৮৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬,৭০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বছরের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরাইলের দীর্ঘকাল ধরে ফিলিস্তিনি ভূমি দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে স্থাপন করা সমস্ত ইসরাইলি বসতি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে ইসরাইলের এই দ্বিচারিতায় পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ অতীব প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।