‘দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক, ৩৪ বছরে এমন টানাপোড়েন আর দেখিনি’

২১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দেশের অর্থনীতি খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে বলে উল্লেখ করলেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। এই অবস্থা চলতে থাকলে বিনিয়োগ অন্যদেশে চলে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের। সেই সাথে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ কমে গেছে, কর্মসংস্থানে দেখা যাচ্ছে সমস্যা, এমনটাই অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। ৩৪ বছর ধরে দেশে বৃহৎ একটি শিল্পগোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন, এমন একজন নামী ব্যবসায়ী বললেন- এমন টানাপোড়েন তার ব্যবসায়িক জীবনে আর দেখেননি। আর এই সময়ে অবিবেচকের মত ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে বলেও মন্তব্য ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিআইসিসির কার্নিভ্যাল হলে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি-২০২৪ আয়োজিত ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর : অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার, জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে বক্তাদের কথায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। বক্তাদের অনেকেই বললেন, এখন প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার যতটা মনোযোগ পাচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ততটা মনোযোগ পাচ্ছে না। এই সরকার কী ধরনের অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার রেখে যাবে সেই প্রশ্নও তুলেন কেউ কেউ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের মতে এখনই আলোচনা করা দরকার। এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আমরা অর্থনৈতিক অস্বস্তি এবং নিরাপত্তার অভাববোধ করছি। আমাদের ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস খুবই কম। আর অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ইনভেস্টরদের (বিনিয়োগকারীদের) নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এই বিষয়গুলো আমরা আগে থেকেই প্রাইভেট সেক্টর থেকে বলেছি। নাসিম মঞ্জুর বলেন, আমরা এখন খুবই সিরিয়াসলি বলছি, আমাদের অর্থনীতি খুবই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। আমি ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করি, এমন টানাপোড়েন আমার পুরো ব্যবসায়িক সময়ে দেখিনি। আমাদের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশে বিনিয়োগ করার জায়গা নেই। সিম্পোজিয়ামের প্রথম অধিবেশনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ও সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজিএস বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ভ্যাট বৃদ্ধিকে অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো এবং শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্চর্য হয়েছি, কীভাবে অবিবেচকের মতো ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেকোনো একটি দেশে যদি আপনি কর সংগ্রহ করতে চান তাহলে ক্রমান্নয়ে তাকে প্রত্যক্ষ করের কাছে যেতে হবে। আমরা দেখলাম না, কোনো প্রত্যক্ষ কর আহরণের জন্য পরিকল্পনা।’ তিনি বলেন, আমরা প্রত্যক্ষ কর আহরণে কোনো পরিকল্পনা দেখছি না। যারা কর দেয় না তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেটা জানা গেল না। আমাদের এটা চিন্তিত করেছে। আগামী গরমে জ্বালানি পরিস্থিতি আরও জটিল হবে এই আশঙ্কা করছি। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো অর্থনৈতিক মেনিফেস্ট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার যতটা মনোযোগ পাচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ততটা মনোযোগ পাচ্ছে না। অনেকেই বলছেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করছে। দেবপ্রিয় বলেন, এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির ধারা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে আমরা যারা সংস্কারকে গতিশীল করতে চাই তারা ধৈর্যহারা হয়ে যাবেন। সংস্কারের পক্ষের মানুষগুলো অর্থনৈতিক অস্বস্তি ও নিরাপত্তার অভাব থেকে সুষম সংস্কারের পক্ষ থেকে সরে যেতে পারে। সিপিডি ফেলো বলেন, যাদের টিআইএন আছে, কিন্তু যারা ট্যাক্স দেন না। তাদের প্রতি কী আচরণ করা হবে তা কিন্তু সরকারের কোনো পরিকল্পনায় নেই। রেকর্ড পরিমাণ আমন উৎপাদন হলেও তা সংগ্রহ অভিযানে কোনো সাফল্য নেই দাবি করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সংগ্রহ অভিযানে দুর্নীতি আছে। কৃষক তার ফসলের মূল্য পাচ্ছে না। সামাজিক সুরক্ষা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে আছে। এই সরকার কী ধরনের অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার রেখে যাবে প্রশ্ন তুলেন এই অর্থনীতিবিদ। সুষম অর্ন্তভুক্তিমূলক, টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে যে ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো দরকার বা সংস্কার দরকার সেই রকমের কোনো রুপরেখা আমরা দেখলাম না, বলেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সংশোধিত বাজেট দিতে পারেনি উল্লেখ করে সিপিডি ফেলো বলেন, এটা না থাকায় অন্যান্য বাজেটের কিছু সূচক পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। আগামী বাজেটকে কেন্দ্র করে সরকারের অর্থনৈতিক আলোচনা দরকার। প্রবৃদ্ধির ধার কমে গেছে, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ কমে গেছে, কর্মসংস্থানে সমস্যা রয়ে গেছে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘সরকার কোনো একটি খাতকে গুরুত্ব না দিয়ে সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করবে বলে আশা করি। ১০০ ইকোনমিক জোন হবে না, সরকারিভাবে সেটা পাঁচটিতে নামিয়ে এনেছি।’