জুলাই আন্দোলনে আসলে লাভবান কারা?
আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কারা? প্রশ্নের জবাবে একবাক্যে নাম নিতে পারেন আওয়ামী লীগের। দেখাও যাচ্ছে এমন। এর সত্যাসত্য বিচার পরে হবে, তার আগে দেখে নিই বেনিফিসিয়ারি কারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন—এরা লম্বা রেসে কোন নামই নয়। সময়ে এরা সামনে এসেছে, এবং সময় হলেই এরা হারিয়ে যাবে। বিএনপি—লম্বা রেসের ঘোড়া স্বাভাবিকভাবেই। ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘদিন থেকে এবার ক্ষমতায় যেতে না পারলেও ক্ষমতাকেন্দ্রের কাছাকাছি যেতে পেরেছে। জামায়াতে ইসলামী—অন্তর্বর্তী সরকার ও ক্ষমতাকেন্দ্রের আনুকূল্যে তারা বর্তমানে কিংস পার্টি। মনে হচ্ছে তারা বেনিফিসিয়ারি। ক্ষমতাকেন্দ্রের বিভিন্ন উইং নানাভাবে প্রমাণের চেষ্টা করছে তারা ক্ষমতায় যাচ্ছে, এবং বিগত আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ ছিল নেতৃত্বসম। এই প্রচারণাকে আমলে নিলে বলা যায়, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান দলের নাম জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলটি দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয়। এমন অনেকেই বেরুচ্ছেন যারা এতদিন বিভিন্ন দলের মুখোশে নিজেদের আড়াল রেখেছিলেন। গত পাঁচ মাসে জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের মুখ থেকে শোনা গেছে তাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে এটাই তাদের সুসময়। জামায়াত-শিবিরের লোকজন বর্তমানকে সুসময় ভাবলেও আমি ভাবছি না তেমন। তাদেরকে জুলাই-আগস্টের বেনিফিসিয়ারি ভাবতেও আমি রাজি নই। আমি ভাবছি বরং আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতিতে আওয়ামী লীগের চাইতেও বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের। আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তন জামায়াত-শিবির নেতাদের প্রকৃত পরিচয় সামনে নিয়ে এসেছে। জনপরিসরে তারা জামায়াত ও শিবির রূপে পরিচিতি পেয়ে গেছেন। এতে তাদের ক্ষণিক লাভ হয়েছে ঠিক, কিন্তু অনাগত ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবেই অন্ধকার। কীভাবে? বলি… ইউনূস-সরকারের জামায়াতকে সামনে নিয়ে আসার একটা জোর প্রচেষ্টা চলমান রেখেছে। এই সরকারের নানা কেন্দ্র ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতকে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনায় রয়েছে বলে দৃশ্যমান। এতে করে ক্রমে প্রগতিশীল ও আধা-প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে জামায়াতের বিরোধ তুঙ্গে উঠবে। প্রতিক্রিয়াশীল অপরাপর গোষ্ঠীকে এক কাতারে নিয়ে এসে জামায়াত ইউনূস-সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে উঠবে। ফলে আদর্শিক বিরোধ মুখ্য হয়ে ওঠতে শুরু করবে। ইউনূস সরকার যদি কোনোভাবে জামায়াতকে ক্ষমতায় বসিয়েও দেয়, তবে এর মেয়াদ হতে পারে বড়জোর ছয় মাস। এরপর তীব্র আন্দোলনে পতন হতে পারে সেই সরকারের। জামায়াতের বয়স বিএনপির চাইতে বেশি হলেও বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কোন একটা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সদস্যসংখ্যার সমান জনসমর্থনও নাই দলটির। ফলে তাদের টিকে থাকা মুশকিল। এবং এখানে সকল রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিরোধ পাশে সরিয়ে রেখে এক জোট হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ, সঙ্গে থাকবে বাম দলগুলো। জামায়াতে ইসলামীকে তাই আগস্টের বেনিফিসিয়ারি বলা যাচ্ছে না। অনাগত দিনে তারা বরং বিশ-চব্বিশের আগস্টকেই অভিসম্পাত দেবে!