প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে যে বার্তা দিলেন ট্রাম্প
দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নিয়েই আমেরিকার মহত্ত্বের একটি নতুন যুগ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সোমবার (২০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ক্যাপিটল রোটুন্ডায় তিনি শপথ গ্রহণ করেন। প্রথম ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট বলেন, আজ থেকে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ ও সম্মানিত হবে। আমি খুব স্পষ্টভাবে বলছি—আমেরিকা হবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা হবে। আমাদের নিরাপত্তা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ন্যায়বিচারের ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। মার্কিন বিচার বিভাগের নৃশংস, সহিংস ও অন্যায় অপব্যবহার বন্ধ করা হবে। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হবে একটি গর্বিত, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন জাতি গঠন করা। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম ভাষণে বাইডেন প্রশাসন এবং তাদের অভিবাসন সংকট ব্যবস্থাপনার কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, দেশের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি উগ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ওপর বিশ্বাসের সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। সাবেক প্রশাসন সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা ভয়ংকর অপরাধীদের জন্য আশ্রয় ও সুরক্ষা প্রদান করেছে, যারা অবৈধভাবে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। ট্রাম্প দাবি করেন যে সরকার বিদেশি সীমান্ত রক্ষার জন্য সীমাহীন অর্থায়ন করেছে। কিন্তু আমেরিকার সীমান্ত রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমাদের এমন একটি সরকার আছে, যা ঘরের ভেতরকার সাধারণ একটি সংকটও সামলাতে অক্ষম। ট্রাম্প বলেন, তাকে সম্পূর্ণ ও নিরঙ্কুশভাবে সেই ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা প্রত্যাহার করার জন্য ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে, যা ক্ষমতাসীনরা আমেরিকান জনগণের বিরুদ্ধে করেছে। তিনি জনগণকে তাদের বিশ্বাস, তাদের সম্পদ, তাদের গণতন্ত্র ও তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেন, এই মুহূর্ত থেকে আমেরিকার অবনতির শেষ হলো। তিনি বলেন, তার সরকার প্রতিটি সংকট মর্যাদা, শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে মোকাবিলা করবে। প্রতিটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও বিশ্বাসের নাগরিকদের জন্য সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনবে। ২০ জানুয়ারি ২০২৫ হলো মুক্তির দিন। তিনি বলেন, আমার আশা, সাম্প্রতিক নির্বাচন আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মহান এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, সব অবৈধ প্রবেশ তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার বিদেশি অপরাধীদের তাদের নিজ দেশগুলোতে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে। আজকের নির্বাহী আদেশে কার্টেল সংগঠনগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করবেন বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ১৭৯৮ সালের এলিয়েন শত্রু আইন ব্যবহার করে তিনি সরকারকে নির্দেশ দেবেন যে ফেডারেল ও রাজ্য আইন প্রয়োগকারীদের পূর্ণ ও বিশাল ক্ষমতা ব্যবহার করে মার্কিন মাটিতে বিদেশী গ্যাংগুলোর অবসান ঘটানো হবে। গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তির কৃতিত্ব নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, তিনি শান্তিদূত ও ঐক্যবদ্ধকারী হবেন। গাজায় হামাসের হাতে আটক তিন ইসরাইলি জিম্মির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকাল তাদের পরিবারগুলোর কাছে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা তার সঠিক স্থান পুনরুদ্ধার করবে। পৃথিবীর সবচেয়ে মহান, সবচেয়ে শক্তিশালী, সবচেয়ে সম্মানিত জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বের পক্ষ থেকে বিস্ময় এবং প্রশংসা অর্জন করবে। এ সময় শীঘ্রই মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকার উপসাগর রাখবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।। তিনি বলেন, তার বার্তা হলো সাহস, উদ্যম এবং ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করা। তিনি তার ভাষণে উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা বলেন। তিনি বিজয় ও সফলতার নতুন শিখরে পৌঁছানোর বিষয়ে আলোচনা করেন। ‘ভবিষ্যৎ আমাদের’ বলে আজকের ভাষণ শেষ করেন ট্রাম্প। নিজের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমেরিকান জনগণ কথা বলেছেন। কোনো কিছু করা অসম্ভব নয়, এর প্রমাণ হিসেবে আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমেরিকায় অসম্ভব কাজটি করা আমাদের সেরা কাজ। আমেরিকাকে কখনো দখল বা ভীত করা যাবে না। সূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি