চ্যালেঞ্জের মুখে সীমান্তহীন ইউরোপের স্বপ্ন
এ বছর জুনে ছোট্ট ইইউ রাষ্ট্র লুক্সেমবার্গের শেনজেন গ্রামে ঘটা করে পালিত হতে যাচ্ছে শেনজেন চুক্তির ৪০তম বার্ষিকী। ১৯৮৫ সালের ১৪ জুন নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স ও জার্মানি এ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার উদ্দেশ্য ছিল এ দেশগুলোর জনগণ যাতে পরিচয়জনিত নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সীমান্ত পেরিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলাচল করতে পারে। শেনজেন অঞ্চলে এখন ২৫টি ইইউ দেশ এবং চারটি নন-ইইউ দেশ রয়েছে। এর মূলনীতি হলো অবাধ চলাচল। কিন্তু তা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের সীমান্তে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ন্ত্রণহীন ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে ওঠা শেনজেন অঞ্চল, যা একসময় ইউরোপীয় ঐক্যের ‘মুকুট’ হিসাবে পরিচিত ছিল, এখন কি সংকটে পড়েছে? লুক্সেমবার্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লিওন গ্লোডেন গত ১২ ডিসেম্বর ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পুনর্বহালের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘লুক্সেমবার্গের জন্য এটি অগ্রহণযোগ্য। শেনজেন ইইউর অন্যতম বৃহৎ সাফল্য। আমরা মানুষের মনে আবার সীমান্ত স্থাপনের অনুমতি দিতে পারি না।’ নজিরবিহীন অভ্যন্তরীণ সীমানা নিয়ন্ত্রণ শেনজেন প্রতিষ্ঠার পর ২০২৪ সালে এসে অভ্যন্তরীণ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। জার্মানিও এখন তার প্রতিটি সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করছে, যা আগে শুধু দক্ষিণ সীমান্তে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমিত ছিল। ২০১৫ সাল থেকে জার্মানি এই সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ চালিয়ে আসছে। ফ্রান্স ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সীমিতভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ চালু করেছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে এটি আরও জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসও জার্মানি ও বেলজিয়ামের সঙ্গে তাদের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি ৯ ডিসেম্বর ইইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বুলগেরিয়া ও রোমানিয়াকে পূর্ণাঙ্গ শেনজেন সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার। তবে ইউরোপীয় কমিশন বারবার জোর দিয়ে বলছে, অভ্যন্তরীণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ‘একেবারে শেষ উপায়’ হওয়া উচিত। তবু কয়েকটি দেশ এই নিয়ন্ত্রণকে এক দশক পর্যন্ত বাড়িয়ে রেখেছে। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার চলমান নিয়ন্ত্রণের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন এই বলে যে, অভিবাসনের উচ্চ সংখ্যা হলো এর কারণ। তিনি বলেন, ‘যতদিন জার্মানিতে অভিবাসীর সংখ্যা এত বেশি থাকবে, ততদিন নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেনজেন অঞ্চল জার্মানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে শরণার্থীদের সমান বণ্টনও প্রয়োজন।’ নিরাপত্তা বনাম মুক্ত চলাচল ইইউর নতুন অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও অভিবাসন কমিশনার অস্ট্রিয়ার মাগনুস ব্রুনার সমস্যাগুলো স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইউরোপীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা উন্নত করতে হবে।’ তবে শেনজেনের আইনি কাঠামো মেনে চলার ওপরও জোর দেন তিনি। যখন শেনজেন ২০২৫ সালে তার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সীমান্তহীন ইউরোপের স্বপ্ন বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই টানাপোড়েনের সমাধান হবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত, যা ইইউর অন্যতম মূল্যবান অর্জনকে একটি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ডয়েচে ভেলে থেকে ভাষান্তরিত বার্নন্ড রিগার্ট : ডয়চে ভেলের ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সংবাদদাতা