গৃহবন্দি চঞ্চল চৌধুরী: রাজনৈতিক হয়রানীর শিকার শিল্পীরা

২০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে বিমানে ওঠার কয়েক মুহূর্ত পর আটক হন দুই বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। বর্তমানে তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং শিল্পী সমাজের উপর নতুন চাপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। নিউ ইয়র্কের উড়ান থেমে গেল ঢাকা বিমানবন্দরে দিন সতেরো আগে চঞ্চল চৌধুরী একটি কাজের সূত্রে ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার যাত্রাপথ ছিল দুবাই হয়ে। বিমানের আসনে বসার পরপরই কয়েকজন বিএনপি নেতা এবং সেনা সদস্য বিমানটিতে প্রবেশ করেন। তাঁরা সোজা চঞ্চলের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করেন, “আপনিও কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন?” অভিনেতা এ ঘটনায় স্পষ্টতই হতভম্ব হন এবং জানান, তাঁর যাত্রার কারণ কর্মসূত্রে। কিন্তু এসব যুক্তি উপেক্ষা করে তাঁকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা হারানোর পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নেমে এসেছে এক অস্থির পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনামলে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভারত বিদ্বেষ, এবং মুক্তমনা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ওপর চাপা নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। চঞ্চল চৌধুরী শুধু অভিনয়ের জন্যই নয়, বরং তাঁর ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কাজের সম্পর্ক এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘পদাতিক’-এ মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্যও এক বিশেষ নজরদারিতে ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে মৌলবাদী শক্তি "দেশদ্রোহীতা" হিসেবে চিহ্নিত করছে। খেলা ও বিনোদন: একই চাপে নতজানু শুধু সাংস্কৃতিক জগতই নয়, রাজনীতির শিকার হচ্ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনও। আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত থাকার কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা শাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। ক্রিকেটার মাশরাফি মুর্তজার বিরুদ্ধেও মামলা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে চঞ্চল চৌধুরী বা জয়া আহসানের মতো অভিনেতারা, যারা নিয়মিত ভারতীয় সিনেমায় কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ছে। জয়া সম্প্রতি কৌশিক গাঙ্গুলীর ‘অর্ধাঙ্গিনী’তে অভিনয় করেছেন। এইসব কাজগুলোকে নতুন শাসনামলে "দেশদ্রোহিতা" হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সাংস্কৃতিক ভবিষ্যতের সংকট চঞ্চল চৌধুরীর গৃহবন্দিত্ব শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য একটি গভীর সংকট। একটি জাতির শিল্প ও সংস্কৃতি যখন দমন-পীড়নের মুখে পড়ে, তখন সেটি সমগ্র জাতির মুক্ত চিন্তা ও সৃজনশীলতাকে নষ্ট করে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও অনেক শিল্পী, বিশেষ করে জয়া আহসানের মতো আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত মুখ, একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন। চঞ্চল চৌধুরীর গৃহবন্দি অবস্থা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট এবং সাংস্কৃতিক জগতের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের উদাহরণ। এ ঘটনা শুধুমাত্র চঞ্চল বা অন্যান্য শিল্পীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে খর্ব করছে না, এটি পুরো দেশের সৃজনশীলতাকে একটি দমবন্ধ পরিবেশে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রয়োজন মুক্ত পরিবেশ এবং রাজনৈতিক সংকীর্ণতার অবসান।