রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা
অন্তর্বর্তী সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পণ্য ও সেবা খাতে মোট ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে পণ্য খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। তবে এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না দেশের ব্যবসায়ীরা। বিদ্যমান জ্বালানিসংকট, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি খাতে ঋণের সংকট, এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা বিজিএমইএ ও বিসিআই’র মতো সংগঠনগুলো সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিজিএমইএ’র এক চিঠিতে জানানো হয়েছে যে, কাঁচামাল আমদানি করতে না পেরে শতাধিক পোশাক কারখানা ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়েছে এবং আরও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিসিআই’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সংকটের কারণে শিল্পকারখানার উৎপাদন প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৪.৫৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে সামনের ছয় মাসে পণ্য খাতে আরও ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করতে হবে। ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে এটি অর্জন করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে। শিল্পখাতের প্রধান সমস্যাগুলো ১. শ্রম অসন্তোষ ও মূলধন সংকট শ্রম অসন্তোষ ও আর্থিক সংকটের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ২. উচ্চ সুদহার ও ঋণের অভাব ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার ব্যবসায়ীদের জন্য বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩. জ্বালানি সংকট ও উচ্চ গ্যাসের মূল্য গ্যাস ও বিদ্যুতের অপর্যাপ্ত সরবরাহ এবং নতুন গ্যাস সংযোগে উচ্চ মূল্য উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নিরুৎসাহিত করছে। ৪. মূল্যস্ফীতি ও চাহিদার অভাব উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। রড, সিমেন্টের মতো শিল্পগুলো চাহিদার অভাবে পণ্যের দাম কমিয়েও টিকে থাকতে পারছে না। ৫. কাঁচামাল আমদানির জটিলতা কাস্টমস শর্ত কঠোর হওয়ার কারণে অনেক শিল্প কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না, যার ফলে উৎপাদন বন্ধের ঝুঁকি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত কার্যকর সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা উল্লেখ করেছেন: ঋণের সুদহার হ্রাস করা। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য স্থিতিশীল রাখা। কাস্টমস ও আমদানি নীতিমালা সহজ করা। আইএমএফের সুপারিশে আরোপিত বাড়তি কর ও মূসক পুনর্বিবেচনা। বিসিআই প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, “টাকার অবমূল্যায়ন এবং ব্যাংকের ঋণের সীমাবদ্ধতা রপ্তানিমুখী শিল্পকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলছে।” বর্তমান পরিস্থিতি রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্যা সমাধানে সরকার এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় নীতিগত সমাধান এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অত্যন্ত কঠিন হবে।