বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় কৃষকদের বিরোধ এড়ানোর পরামর্শ বিএসএফের

১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৪:৩১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সীমান্তে চলমান উত্তেজনায় ভারতীয় কৃষকদের বিরোধ এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। রোববার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু। গতকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার সুখদেবপুর সীমান্ত চৌকিতে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রতিদিনের মতোই ভারতীয় কৃষকরা সীমান্তের কাছের তাদের খেতে কাজ করতে গেলে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। কিছুদিন আগে একই সীমান্ত চৌকিতে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মধ্যে সীমান্ত বেড়া নিয়ে মতপার্থক্য দেখা গিয়েছিল। বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ইউনিট থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ভারতীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, সীমান্তের ওপারে কাজ করা বাংলাদেশি কৃষকরা ফসল চুরি করছে, যা নিয়ে দুদেশের কৃষকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে যখন দু দেশের বিপুল সংখ্যক কৃষক একত্রিত হয়ে গালিগালাজ ও পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএসএফ ও বিজিবি জওয়ানরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে উত্তেজনা চললেও কোনো আহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সংঘর্ষের ভিডিও সম্প্রচার করে। বিএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় কৃষকদের এমন বিরোধ এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং সমস্যার ক্ষেত্রে বিএসএফকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বিজিবিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে এবং তাদের এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএসএফ ও বিজিবি ইউনিট কমান্ডান্টরা নিজেদের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় স্থাপনের চেষ্টা করছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যায়। এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শনিবার দুপুরে সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে বাংলাদেশের ভেতরের জমিতে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন দুই যুবক। এসময় ফসলি জমি বিনষ্টের অভিযোগ তুলে তাদের মারধর করেন ভারতীয়রা। পরে তারা বাংলাদেশের ভেতরের কয়েকটি আমগাছ কেটে দেন এবং ফসলি জমি বিনষ্ট করেন। এতে ক্ষিপ্ত বাংলাদেশিরা সীমান্তে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এই ঘটনায় শনিবার বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের চৌকা এবং কিরণগঞ্জ দুটি বিজিবি ক্যাম্পের মাঝামাঝি স্থানে ১৭৭ এর ৩এস বরাবর বাংলাদেশি কিছু আমগাছ ছিল। বাংলাদেশের আমগাছ কাটাকে নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুই দেশের মানুষ শূন্যরেখা বরাবর দাঁড়িয়ে যায়’। তিনি বলেন, আমরা বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করেছি। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে, যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, অন্যায় হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা এটা ব্যবস্থা নেবে। সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি। কেউ যেন শূন্যরেখা অতিক্রম না করে, উত্তেজনাকর পরিবেশ প্রশমিত করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। বিজিবির পাশাপাশি দেশপ্রেমিক জনগণ আমাদের পাশে আছে।’ অভিযোগ উঠেছে বিজিবি সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছে এবং বিএসএফ বোমা নিক্ষেপ করেছে। এমন প্রশ্নে বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা হচ্ছে আমাদের মব কন্ট্রোল করার জন্য...উল্লেখযোগ্য আহত হওয়ার পরিসংখ্যান নেই। বিএসএফের কেউ আহত বা নিহত হয়েছে কি না আমরা এখনো জানতে পারিনি।’ লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়ার দাবি, এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে বিএসএফ। যদিও বিএসএফ তাদের বিবৃতিতে দায় এড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ‘মব কন্ট্রোল করার জন্য ওরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। আমি বিজিবি মহাপরিচালককে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করেছি। আশা করি, বিজিবি ও বিএসএফ সদর দফতরে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবেন’।