মমতা ব্যানার্জিকে যে পরামর্শ দিলেন অলি
ভারতকে আওয়ামী লীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে বলে মনে করেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ডিজিটালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে অলি আহমদ এ পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমি বহুবার বলেছি, ভারতের উচিত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক করা— কোনো দালালের মাধ্যমে নয়, কোনো দলের মাধ্যমে নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক করা। আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি নই। ভারত যে আমাদের সাহায্য করেছে, সেটি আমরা হাড়ে হাড়ে স্মরণ করি। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, আমরা তাদের অঙ্গরাজ্য। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। তাদেরও সুপ্রতিবেশীসুলভ ব্যবহার করতে হবে। কর্নেল অলি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন— বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তি মিশনের সদস্য পাঠানো উচিত। আমি মমতা ব্যানাজিকে পরামর্শ দেব— ভারতের প্রত্যেকটা রাজ্যে মুসলমানদের ওপর কী অত্যাচার হচ্ছে, সেটি পরিলক্ষণ করার জন্য প্রত্যেকটা রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী নিয়োগ করা উচিত; কাশ্মীরে শান্তি বাহিনী নিয়োগ করা উচিত; মমতা ব্যানার্জি কি সেটি পেরেছেন? তিনি বলেন, কাশ্মীরে যে এতগুলো লোক মারা যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যা করছে, রাস্তায় যখন মুসলমানরা নামাজ পড়ে, তাদের পেছনে লাথি মারছে— মমতা কি সেগুলো দেখেননি? এলডিপির চেয়ারম্যান বলেন, মমতাকে আমি অনুরোধ করছি— আপনি একজন সাধারণ ট্যুরিস্ট হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। এসে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জেলায় যান, কোনো হিন্দুর ওপর জুলুম করা হয়নি। হয়তো কোনো কোনো আওয়ামী লীগ নেতার ওপরে কিছু কর্মকাণ্ড হয়েছে। কারণ তারা ১৫ বছর ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন করেছে। অনেকের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, ঘরবাড়ি দখল করেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করেছে, টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়েছে এবং জেলে নিক্ষেপ করেছে। ওই নেতাদের ঘরবাড়ি দুই-একটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেখানে যদি হিন্দু পড়ে থাকে, সেটি তো হিন্দু হিসেবে হয়নি, সেটি আওয়ামী লীগের একজন সদস্য হিসেবে হয়েছে। কিছু দিন আগে মুন্নী সাহাকে আটক করা হয়েছিল, পরে ছেড়ে দেওয়া হলো। তাকে তো হিন্দু হিসেবে আটক করা হয়নি। অলি আহমদ বলেন, আরও অনেক হিন্দু আছেন, যারা আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা ছিলেন। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ভারতের এটা ধরে নেওয়া উচিত না যে, এটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটা আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং ভারতকে এ পার্থক্যটা বুঝতে হবে— আওয়ামী লীগের সদস্য আর হিন্দু সম্প্রদায়। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় তো খুব শান্তিতে আজ বসবাস করছে। হিন্দু সম্প্রদায় যেভাবে বিভিন্ন বড় বড় চাকরিতে অধিষ্ঠিত আছে, ভারতে কয়জন মুসলমান আছে? দেখাক ডাটা, বের করুক, কয়জন মুসলমান সেক্রেটারি আছে নাম বলুক? আর আমাদের এখানে কয়জন আছে দেখুক। পুলিশে কতজন আছে, সিভিল প্রশাসনে কতজন আছে, আর্মিতে কতজন আছে, নেভিতে আছে, এয়ারফোর্সে আছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কয়জন আছে। আর ভারতে কয়জন মুসলমান আছে? সুতরাং ভারতের পক্ষে এগুলো মানায় না। যেখানে হিন্দুত্ববাদী প্রাধান্য পেয়েছে, সেখানে মানায় না। আমাদের এখানে কিন্তু কোনো মুসলমানের প্রাধান্য নেই। আমরা মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দিয়েছি— যার যার ধর্ম সে বিনা বাধায় পালন করবে; স্বাধীনভাবে পালন করবে; বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে পালন করবে। এটা কুরআনের শিক্ষা— আমার নবীর শিক্ষা, সেটাই আমরা পালন করি।