শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের কোটি টাকার সরঞ্জামাদি নষ্ট

১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

গাইবান্ধার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ তালাবদ্ধ থাকে। ল্যাবগুলোতে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো দিয়ে কোনো কাজ হয় না। কোটি টাকার সরঞ্জামাদি নষ্ট হচ্ছে; শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষা ও আইসিটি ক্লাসের নামে চলছে প্রতারণা। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের নামে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোক দেখানো ক্লাস হয়েছে। কোথাও কম্পিউটার নেই কিন্তু শিক্ষক আছে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে তার সবগুলোই নষ্ট। ফলে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষা ও আইসিটি ক্লাসের নামে চলছে প্রতারণা। সরকারি খাতাপত্রে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর, ফুলছড়ি, পলাশবাড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১১৭টি কলেজ, মাদ্রাসা ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হয় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের জন্য কম্পিউটার। শিক্ষার্থীদের আইসিটি ক্লাসে কম্পিটারবিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার জন্য আলাদা ল্যাব করা হয়। স্কুলের বাইরে ঘটা করে ল্যাবের সাইনবোর্ড লাগানো হলেও ল্যাবগুলো মূলত কোনো কাজে আসেনি। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ল্যাপটপ দেওয়া হলেও সেগুলো দেওয়ার পর থেকেই ছিল নষ্ট। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো দিয়ে কোনো কাজ হয় না। ল্যাপটপগুলো দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মতো করে। দীর্ঘদিন ল্যাপটপগুলো মেরামত না করায় সেগুলো এখন সের দরে বিক্রি করলেও পয়সা আসবে না। তাছাড়া শিক্ষা বিভাগও এ নিয়ে কোনোকিছু ভাবে না। তারপরও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার শিক্ষক, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে লোক নিয়োগ রয়েছে। তাদের কোনো কাজ নেই। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের কাগজপত্র অনুয়ায়ী গাইবান্ধার সাত উপজেলার সুন্দরগঞ্জে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, পলাশবাড়িতে ১২টি, গোবিন্দগঞ্জে ২৯টি, ফুলছড়িতে ৫টি, সাঘাটায় ১২টি ও গাইবান্ধায় ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ মোট ১১৭টি প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ২৫৭টি নতুন ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। ক্লাসও করার কথা নিয়মিত। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থাকে তালাবদ্ধ। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়, তারা নিয়মিত ক্লাস নেন। কিন্তু কথা হলো তাদের ল্যাবের সব কম্পিউটার নষ্ট। দেওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই তা অব্যবহৃত পড়ে আছে ল্যাবে। সুন্দরগঞ্জ কাঠগড়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৭টি কম্পিউরের সবগুলোই নষ্ট। তাহলে শিক্ষার্থীরা আইসিটি ক্লাসের নামে কি শিখছে। অন্যদিকে সুন্দরগঞ্জের চ্যাংমারি বিএল উচ্চ বিদ্যালয়, ধর্মপুর পিএন বালিকা বিদ্যালয়, ধোপাডাংগা বালিকা বিদ্যালয়, চণ্ডিপুর এটিএন বালিকা বিদ্যালয়, ধাপাছিলা বিএন বিদ্যালয়, ধনিয়ার কুড়া উত্তর রাজিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়, খামার মনিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ মণ্ডল উচ্চ বিদ্যালয়, জামালহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাসিম বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রামভদ্র উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্তত ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু দেওয়ার পরপরই সেগুলো আর চালু করা যায়নি। নির্দিষ্ট একটি ক্লাস রুমে সেগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হলেও তা শিক্ষার্থীদের কোনো কাজেই আসেনি। দেওয়া হয়েছে স্মার্ট টিভি ও প্রজেক্টর মেশিন। এসব সরঞ্জাম সবই ক্লাসের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য। কিন্তু কোনো স্কুলেই প্রজেক্টর মেশিন দিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়নি। এখনো হয় না। বাস্তবে গিয়ে দেখা যায়, ধুলাবালু জমে সেগুলো অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারি খাতাপত্র এবং স্কুলের মাসিক ও বার্ষিক রিপোর্টে দেখানো হয় ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও প্রজেক্টর সব ভালো আছে এবং এসব দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। গাইবান্ধা শহরের আসাদুজ্জামান স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের কম্পিউটার রুম অনেক দিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। শিক্ষকরা ক্লাস নিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিয়ে এলেও তারা অনেকেই কম্পিউটার ওপেন করতেই পারেনি। আবার কোনোটা নষ্ট হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কেউ খোঁজ রাখেনি। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য সাবেক হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনির স্বামী নাকি এসব এনে দিয়েছেন। এরপর তিনি শুধু শিক্ষক নিয়োগের ভাগ নিয়েই ছিলেন ব্যস্ত। শিক্ষার্থীদের কাছে জিজ্ঞেস করে তারা জানায়, তারা দুএকদিন কম্পিউটার ক্লাস করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক শিক্ষক আছেন তিনি নিজেই কম্পিউটার জানেন না। এ বিষয়ে তার অ্যাকাডেমিক কোনো শিক্ষা নেই। দুএকদিন কোথাও একটু শিখে চাকরি পেয়েছেন স্বৈরাচারী আমলে টাকা আর মামার জোরে। গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা বেগম জানান, আসলে সব কম্পিউটার নষ্ট নয়। আমরা তো রিপোর্ট নিয়েছি, কিছু ভালোও আছে। তবে নেওয়ার সময় শিক্ষকরা এমপির ডিও লেটার নিয়ে কম্পিউটারগুলো নিয়েছে। সঙ্গে লোকজনও নিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। তবে এ বছর নতুন কারিকুলামে সংযুক্ত হচ্ছে। ল্যাবগুলো আবার ব্যবহার উপযোগী করা হবে।