দুই নেতাকে বহিষ্কার করে যে বার্তা দিলেন মমতা
দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সাবেক সাংসদ ও এক বিধায়ককে বহিষ্কার করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার দুই নেতা শান্তনু সেন ও আরাবুল ইসলামকে বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত জানায় দলটির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। তবে তাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা ঠিক কতদিন বজায় থাকবে সেটি জানানো হয়নি। নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা না জানালেও এই দুই নেতাকে বহিষ্কারের মাধ্যমে যে দলের বাকিদেরও বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা সেটা পরিষ্কার। চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন শাসক দলের সাবেক সাংসদ। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই তার সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের টানাপোড়েন চলছিল। রাজ্যসভার সাংসদের মেয়াদ শেষে শান্তনুকে লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী করা হয়নি। বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনেও টিকিট পাননি শান্তনু। আর এই অবস্থায় নতুন করে আরজি কর আন্দোলনে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তিনি। পাশে দাঁড়ান শান্তনুর স্ত্রী, কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর কাকলি সেন। আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে পথেও নামেন তারা। যা অস্বস্তিতে ফেলে তার দলকে। শান্তনুকে বহিষ্কার করার পেছনে একেই সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে বাম আমলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙর ও আরাবুল ইসলাম প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল। ভাঙরের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে পায়ের তলার মাটি হারাতে থাকেন নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া আরাবুল। এর পাশাপাশি একই এলাকায় উঠে আসতে থাকেন অন্যান্য নেতারা। সাম্প্রতিক অতীতে আরাবুলের অবস্থান দলে একেবারেই নড়বড়ে হয়ে উঠেছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বিরোধী দলের এক কর্মীর খুনের মামলায় আরাবুলের গ্রেফতারি দেখে বোঝা গিয়েছিল, তৃণমূলে তার দিন শেষ হয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত সেটিই হলো। অবশ্য দলের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শান্তনু ও আরাবুল। শান্তনু বলেন, ‘অনেকে বলছেন, আরজি কর নিয়ে আমি দলবিরোধী কাজ করেছি। আমাকে কেউ প্রমাণ করে দিক, আমি কোন দলবিরোধী কাজ করেছি। তা হলে আমার ক্ষমা চাইতে কোনও সমস্যা নেই।’ তৃণমূলের অন্দরে টানাপোড়েনের জেরে শান্তনু বিপাকে পড়লেন বলে অনেকে মনে করছেন। যদিও চিকিৎসক নেতা মানতে চাননি যে, তিনি অভিষেক শিবিরের অনুগত। বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠন বড় করেছেন। দুজনের নির্দেশ মেনেই আমরা কাজ করি৷ বিরোধের প্রশ্ন নেই।’ তৃণমূল নিয়ে যে জল্পনাই থাকে না কেন, মমতার নেতৃত্ব প্রশ্নাতীত বলেই অনেকের মত। সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘তৃণমূলে ব্যক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দলটা তৈরি হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে। তিনিই সমস্ত ভোটব্যাংক। তিনি সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন। লোকসভা নির্বাচনের পরে দলের পরিষদীয় বৈঠকে বা দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তিনি সেটা স্পষ্ট করেছেন। তিনি নিশ্চয়ই মনে করেছেন আরাবুল ইসলাম বা শান্তনু সেন দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন। আজকের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মমতা যদি মনে করেন, এ আমার দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করছে বা এই নেতা আরজিকর আন্দোলনের সময় বিরোধীদের মদত দিয়েছে, তা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল দলটা এতটাই মমতা কেন্দ্রিক, তিনি যেহেতু সর্বময় নেত্রী, তিনি যা মনে করবেন সেটাই হবে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘একটা সময় আরাবুল বা শান্তনু সেন দলের সৎপাত্র হয়ে কাজ করেছে। এখন অনেক নতুন নেতার উৎপত্তি হয়েছে, ফলে অতীতের সৎপাত্র নেতার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এরা থাকলে সেই সমস্ত নেতাদের কাজকর্মের অসুবিধা হচ্ছে। আমরা ভাঙরে দেখেছি, শওকত মোল্লার দাম আরাবুল ইসলামের থেকে অনেক বেশি। এই কারণে আরাবুলকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আরজি করের ঘটনায়শান্তনু সেনের তুলনায় সন্দীপ ঘোষ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরা কোন কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে দলের কাছাকাছি এসে গেলেন, কতদিনের জন্য এবং কেন সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা বলা হয়নি। এদের শুধু বার্তা দেয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে তোমরা দলের কাছে অতটা প্রয়োজনীয় নও।’