ঠাকুরগাঁওয়ে গভীর রাতে ‘ইত্যাদি’
ঠাকুরগাঁওয়ে আয়োজন করা দেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র শ্যুটিং ঘিরে ভাংচুর ও মারামারির ঘটনায় অনুষ্ঠানটি সাময়িকভাবে পণ্ড হয়ে যায়। অবশেষে রাত ১১ টা থেকে মধ্যরাত অব্দি তুলনামূলক অল্পসংখ্যক দর্শক নিয়েই ধারণ করা হয় ইত্যাদি, যা পরিকল্পনাকে সীমিত করে করা বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। ৩১ শে জানুয়ারি এই অনুষ্ঠান প্রচার হতে পারে বলে ইত্যাদি সুত্র জানায়। রাণীশংকৈল প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোবারক আলী জানান, জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে মারামারি ও চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে নির্ধারিত সময়ের আগেই পরিচালক হানিফ সংকেত অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেন। তবে মধ্যরাতে স্বল্পসংখ্যক দর্শক নিয়ে আবারও শুটিং শুরু হয়। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে রাজবাড়ীতে ইত্যাদির অনুষ্ঠান ঘিরে সংঘর্ষ শুরু হয়, সেখানে ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভেসে আসে ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের পরিচালক হানিফ সংকেতের ঘোষণা। তিনি অনুষ্ঠান স্থগিতের ঘোষণা দেন এবং এরপর অনুষ্ঠান আর এগোয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলাজুড়ে প্রায় ২ হাজার প্রবেশ পাশের ব্যবস্থা করেছিল ‘ইত্যাদি’ কর্তৃপক্ষ। তবে অনুষ্ঠানে লাখখানেক মানুষের সমাগম হয়। একপর্যায়ে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষ একাধিকবার পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। উপায় না পেয়ে মাঝপথে এসে অনুষ্ঠান স্থগিতের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। রাণীশংকৈল ফেসবুক ব্যবহারকারী নামের একটা ফেসবুক গ্রুপে একজন লিখেছেন, যারা টিকিট কারসাজিতে ছিলেন তাদের কারণেই আজ এই বিশৃঙ্খলা হল, তাদেরকে সবাই ধরে থানায় দিন অন্য আরেকজন লেখেন,প্রোগাম টা নষ্ট হওয়াতে অনেকের খারাপ লাগতেছে। লাগাটা স্বাভাবিক। জায়গা স্বল্পতার জন্য ওখানে প্রোগাম টা না করার জন্য আগে প্রতিবাদ করা উচিত ছিলো। এখন দু:খ প্রকাশ করে লাভ নাই। এমন পরিস্থিতির জন্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শনার্থীরা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন। বিভিন্ন ছবি ও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে অনেকে সমালোচনাও করেছেন। ইত্যাদি অনুষ্ঠানে আসা সানোয়ার হায়দার সবুজ বলেন, “আমি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে প্রবেশের পাস নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। তবুও অনুষ্ঠানে ঢুকতে পারলাম না। এটা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার জন্যেই হয়েছে।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শনার্থী রাসেল বলেন, “অতিরিক্ত দর্শনার্থী উপস্থিতির ধারণা আগে থেকেই ছিল। তবু কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা।” এম এ সামাদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “আমি আর কখনো ইত্যাদি দেখতে যাব না।” আব্দুল্লাহ আল সুমন নামে এক দর্শনার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, “অতিরঞ্জিত কোনো কিছু ভালো না। একদল মানুষ এখন বলবে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ ভালো না।” এরপর তিনি লিখেছেন, “আমি বলব এর দায়িত্বে যারা ছিলেন, হয়তো তারা দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে জানেন না অথবা এর যোগ্যতা তাদের ছিল না।” তবে এই ঘটনার সম্পূর্ণ দায় উৎসুক জনতাকে দিয়ে অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠান স্থগিত করার ঘোষণায় ইত্যাদি অনুষ্ঠানের পরিচালক হানিফ সংকেত বলেন, অনেক চেষ্টা করেও আপনাদের শান্ত করতে পারলাম না। আপনাদের জন্যই একটি সুন্দর আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। তবে সেটা আর সম্ভব হলো না। পারলাম না, আমি ব্যর্থ। স্বল্প সংখ্যক দর্শক নিয়ে স্যুটিং পুনরায় শুরু হলে দর্শকদের উদ্দেশ্যে আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা ঠাকুরগাঁও বড়মাঠে অনেক বিশাল পরিসরে এই আয়োজনটা করতে পারতাম। যেহেতু আমরা একটা ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী জায়গায় অনুষ্ঠানটির চিত্রধারণ করতে চেয়েছি, তাই টংকনাথের রাজবাড়িকে বেছে নিয়েছিলাম। এটা এক বালতি দুধে একফোঁটা চোনার মতো হয়েছে।”